করোনা রোগীদের চিকিৎসা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দেরিতে হলেও কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করে নিজ নিজ বাসাবাড়িতে থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। অনেক স্থানে পুলিশ তৎপর হয়েছে; উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিদেশফেরত লোকজনদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সর্বশেষ ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসে টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে; বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য ২৪ মার্চ থেকে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই সমস্ত উদ্যোগের প্রাথমিক লক্ষ্য করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ করা। অত্যন্ত জনবহুল এই দেশে করোনাভাইরাসের বিপদ সম্পর্কে যথেষ্ট জনসচেতনতার অভাবের প্রেক্ষাপটে এমন ব্যাপক মাত্রায় সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাস্তবায়ন করা এক বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি, প্রাতিষ্ঠানিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।

তবে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করাই একমাত্র করণীয় নয়; মহামারি সম্ভাব্য বিস্তার দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এখনই নেওয়া প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ের অবস্থা বিশ্লেষণ করে পুলিশের কর্মকর্তারা এক ‘ভয়ংকর পরিণতি’র আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২০ দিনে বিদেশ থেকে ফিরেছেন ২ লাখ ৯৩ হাজার মানুষ। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এসেছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলো থেকে। তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৮ হাজার বিদেশফেরত স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে আছেন। অধিকাংশ বিদেশফেরত ব্যক্তি গত সপ্তাহ পর্যন্ত এসব প্রবাসী স্বাভাবিকভাবেই গ্রামগঞ্জে, হাটবাজারে ঘুরেছেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সংক্রমিত হয়ে থাকলে তাদের সংস্পর্শ থেকে আরও কত মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, সে বিষয়ে কোনো ধারণাই করা যাচ্ছে না। এ কারণেই পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘ভয়ংকর পরিণতি’র আশঙ্কা।

সম্ভাব্য পরিস্থিতি যখন এই, তখন আমাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ইতিমধ্যে গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বস্তুত কার্যকর প্রস্তুতি রয়েছে খুবই সামান্য। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, এই ভয়ংকর ছোঁয়াচে ভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ থেকে চিকিৎসক, নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিশেষত চিকিৎসক ও নার্সদের পিপিই ছাড়া এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে চিকিৎসকদের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে; হাসপাতালগুলোতে তাঁরা জ্বর-কাশি-গলাব্যথার রোগী এলে তাঁরা দূরত্ব বজায় রাখছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসাই নয়, অন্য রোগীদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন চিকিৎসাও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

করোনাভাইরাস অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে হওয়ায় একই হাসপাতালে অন্যান্য রোগী ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের একসঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শুধু করোনা রোগীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল প্রয়োজন। এখন মূলত ঢাকার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা হচ্ছে। এটিসহ আরও আটটি হাসপাতালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। একটি মোটামুটি প্রস্তুত, দুটির প্রস্তুতি প্রাথমিক পর্যায়ে, বাকিগুলোর প্রস্তুতি নেই। সেগুলো দ্রুত প্রস্তুত করা হোক।