করোনাভাইরাস মোকাবিলা

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সার্বিক তৎপরতা আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু এটা এমন এক যুদ্ধ, যেখানে জনগণের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তারা নিজেরা সচেতন হয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে না রাখলে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগের পাশাপাশি জরুরি বিষয়টি হচ্ছে এর সংক্রমণ ঠেকানো। আর সামাজিক যোগাযোগবিচ্ছিন্নতাই হচ্ছে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর একমাত্র পথ। এসব বিবেচনায় সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে এবং জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

এটা দুঃখজনক যে ঘরে থাকার এই আহ্বান অনেকেই যথাযথভাবে মানছেন না। সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়ার পর শুরুতে জনগণ যেভাবে সাড়া দিয়েছিল, এখন তাতে শিথিলতা দেখা দিয়েছে। অনেকেই আবার ঘর থেকে বের হতে শুরু করেছেন। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিপদ বাড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরে থাকার পাশাপাশি এমনকি পরিবারের মধ্যেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং প্রতিটি ব্যক্তি ও পরিবারকে বুঝতে হবে, পুরো বিশ্বসহ বাংলাদেশ একটি স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে হলেও এত দিনকার জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে।

করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশগুলোর একটি ইতালি। দেশটির তরফে গতকাল ঘোষণা করা হয়েছে, সামাজিক দূরত্বে মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়া দেওয়ার কারণে সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই দীর্ঘ সময় ধরে লকডাউন চলছে। আমাদের জনগণকে বুঝতে হবে, ব্যক্তি নিজের সুরক্ষার বিষয়ে উদাসীন হলে তাকে সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে গত সোমবারও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত নয়। আমরা সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় ধাপে পড়েছি। এর অর্থ কমিউনিটি বা স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এটা এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু জনগণ সচেতন না হলে এটাকে আর সীমিত রাখা যাবে না। আইইডিসিআর বলেছে, সারা বিশ্বের সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় না আসা পর্যন্ত প্রতিরোধ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য ঘরে থাকা জরুরি।

সরকার অফিস-আদালত বন্ধ করেছে। জরুরি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সেনাবাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করেছে। সাধারণ ছুটি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে যে সামনের দিনগুলো বাংলাদেশের জন্য সংকটপূর্ণ হতে পারে। এসব বিবেচনায় নিয়ে জনগণকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ঘর থেকে বের না হয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই এই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যৌক্তিক কারণ ছাড়া বাইরে বেরোনো, রাস্তাঘাটে অহেতুক ঘোরাঘুরি, আড্ডা বা জটলা ইত্যাদি বন্ধ রাখা নিশ্চিত করতে হবে। নজরদারি বাড়ানোর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজটি করতে হবে। একই সঙ্গে বিশেষ জরুরি কিছু প্রয়োজনে যেহেতু জনগণকে বের হতে হয় বা হবে এবং যেহেতু কিছু সেবা চালু রাখতে সেবা প্রদানকারীদের চলাচল করতে হবে, তাই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।