করোনা পরীক্ষার সম্প্রসারণ

কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ পরীক্ষার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশি বেশি পরীক্ষার ওপর জোর দিলেও সেই কাজটি শুরু থেকে করা হয়নি। কেন্দ্রীয়ভাবে শুধু সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষাটি করা হতো। পরীক্ষার সংখ্যাও ছিল খুবই সীমিত। বিলম্বে হলেও এখন ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে ১৪টি ল্যাবে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আরও তিনটি ল্যাব প্রস্তুতের কাজ চলছে।

পরীক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশের মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রীর অভাবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও শুরুতে ভয় পেয়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগীদের পরীক্ষা ও চিকিৎসা ছাড়াই ফিরে যেতে হয়েছে। এর কারণ ছিল করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের উপসর্গের সঙ্গে কয়েকটি সাধারণ রোগের উপসর্গ মিলে যাওয়া। যেমন করোনা সংক্রমণের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, গলাব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি হয়ে থাকে। আবার অন্য রোগের কারণেও এসব উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে। একমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা সম্ভব কোনটি করোনাজনিত, আর কোনটি নয়। ফলে পরীক্ষার ঘাটতি সংকটকে গভীর করেছে।

 এখন দেশের ১৪টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষার কাজ চলছে। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষকে পরীক্ষা করা যাচ্ছে। আগে এই সংখ্যা ছিল ৫০ থেকে ৬০। প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন ১০০০ জনকে পরীক্ষার কথা বলেছেন। অন্য যে তিনটি ল্যাব প্রস্তুতের কাজ চলছে, সেগুলো কাজ শুরু করলে হয়তো পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়বে।

তবে পুরো প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এখন অনেক সমস্যা ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। ল্যাবগুলো প্রস্তুত থাকলেও পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা পাঠাতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সব প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে নমুনা সংগ্রহের নিয়ম নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরীক্ষার জন্য নমুনা সরবরাহ করার কথা আইইডিসিআর ও জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান আইপিএইচের। নমুনা সংগ্রহের জন্য জনবল, সরঞ্জাম ও যানবাহনের ঘাটতির কথা জানা গেছে। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এই বাস্তবতা আমাদের মানতেই হবে যে সন্দেহভাজন সব আক্রান্তকে পরীক্ষা করাই হচ্ছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করার সবচেয়ে কার্যকর পথ। কেউ আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হলে তাঁকে যেমন সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা সম্ভব, তেমনি তার সংস্পর্শে আশা লোকজনকেও সম্ভাব্য আক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করে বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করা যাবে। তাতে অন্য লোকজনকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো যাবে।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার হার বেড়েছে, এটি আশাব্যঞ্জক। পরীক্ষার ঘাটতি থাকায় করোনার লক্ষণ আছে এমন অনেক রোগী চরম বিপদে পড়েছেন। এমনকি করোনার লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুবরণ করার পর সেই রোগীর স্বজনেরা বিপাকে পড়েছেন। কোথাও কোথাও পুরো পরিবারকে অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছে। এমনটি স্বাভাবিক পদ্ধতিতে তাঁর জানাজা ও দাফনও সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর পর পরীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে যে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। স্বজনেরা যদি আগে জানতেন তাহলে তাঁকে সে অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দেওয়া যেত এবং স্বজনেরা সাবধানে থাকতে পারতেন।

আমরা আশা করছি করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এখনো যে সমন্বয়হীনতা ও সমস্যা রয়ে গেছে, তা দূর করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।