বেতন-জটিলতা ও কারখানা খোলা

করোনা–সংক্রান্ত জাতীয় সংকটের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের দুটি নতুন সমস্যা বাড়তি উদ্বেগ নিয়ে হাজির হয়েছে। একটি হলো সরকার ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলেও বহু পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে চাকরি বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং জাতিকে ঝুঁকিতে ফেলে পোশাককর্মীদের কারখানায় ফিরতে হয়েছে। অন্যটি হলো সরকার তার দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা পোশাককর্মীদের বেতন হিসেবে তাঁদের অ্যাকাউন্টে দিতে বলার পর মালিকেরা বলেছেন তা সম্ভব নয়।

৫ এপ্রিল কারখানা খুলবেই—এ ঘোষণায় শুক্রবার থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মানুষের ঢল নামে। পরদিন শনিবার সকালেও একই চিত্র দেখা গেছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় হেঁটেই তাঁদের ছুটতে হয়েছে। গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে এই দৃশ্য বেশি দেখা গেছে। তাঁদের চোখে–মুখে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের পাশাপাশি ছিল কাজ হারানোর ভয়।

শ্রমিকেরা বলেছেন, ৫ এপ্রিল হাজির না হলে বেতন কাটা যাবে। অনেক মালিক চাকরিচ্যুতিরও হুমকি দিয়েছেন। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা এর দায় নেননি। তাঁরা বলেছেন, পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত তাঁরা মালিকদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। কথা হলো, একটি টি-শার্ট তৈরি করতে কমপক্ষে ৩০ জন শ্রমিকের হাতের ছোঁয়া লাগে। একজন ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এই ৩০ জনের এবং তঁাদের মাধ্যমে বাইরের আরও লোকের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। আর অফিস–আদালত বন্ধ করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে যে যুক্তিতে অর্থাৎ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে, পোশাক কারখানা খোলা রাখা হলে সে উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হবে?

পোশাকশ্রমিকদের বেতন–ভাতাপ্রাপ্তির বিষয়ে সরকারের নজর আছে। সে কারণেই রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থছাড় বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শুধু শ্রমিক–কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য এ অর্থ ব্যবহার করা যাবে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষা সাপেক্ষে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) হিসাবের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীকে এ অর্থ দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলে পোশাকমালিকেরা বলছেন, সব শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই তাঁদের পক্ষে সব শ্রমিককে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না।

পোশাকশিল্প আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত; তাই এ বিষয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছা দরকার।