শনাক্তকরণ পরীক্ষা দ্রুত বাড়ুক

সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে রোগী শনাক্ত করা প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ, যথাসম্ভব দ্রুত রোগীদের শনাক্ত করে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা না হলে তাদের কাছ থেকে রোগটি আরও অনেক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে কোভিড–১৯ বৈশ্বিক মহামারি আকারে দেখা দেওয়ার শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। যেসব দেশ এই মহামারি মোকাবিলায় তুলনামূলকভাবে সাফল্য দেখিয়েছে, তারা অতি দ্রুত ব্যাপকসংখ্যক ব্যক্তির ওপর শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালিয়ে সংক্রমিত ব্যক্তিদের বিচ্ছিন্ন করার মধ্য দিয়েই তা করতে পেরেছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্তকরণ পরীক্ষার বিষয়ে শুরু থেকে অবহেলা লক্ষ করা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবিরাম তাগিদ, বিশেষজ্ঞদের পুনঃপুন গুরুত্বারোপ ও সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি সত্ত্বেও করোনা সংক্রমণ শনাক্তকরণ পরীক্ষার এখতিয়ার একটি মাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে। দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের পর পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বটে, কিন্তু তারপরও সর্বশেষ হিসাবে দেখা যাচ্ছে পরীক্ষার হার নিতান্তই কম।

এখন ঢাকায় ৯টি ও ঢাকার বাইরে ৫টি পরীক্ষাকেন্দ্রে কোভিড–১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে বলে সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে। এই ১৪টি পরীক্ষাকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা হলো দৈনিক অন্তত ৪ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা। কিন্তু গত শনিবার পর্যন্ত তাদের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪৩৪ নমুনার পরীক্ষা। মোট সক্ষমতার মাত্র ১২ শতাংশ কাজে লাগানো হচ্ছে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত, দুই মাসেরও বেশি সময়ে পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫৪৭ ব্যক্তির নমুনা।

প্রধানত এ কারণেই এ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ও এই রোগে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা এখন পর্যন্ত বেশ কম: রোববার পর্যন্ত যথাক্রমে ৭০ ও ৯। এই সংখ্যা দুটো যদি এ দেশের করোনা-পরিস্থিতির প্রকৃত বাস্তবতা নির্দেশ করে থাকে, তবে তা অন্যান্য দেশের তুলনায় অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এত অল্পসংখ্যক মানুষের ওপর শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালানো হয়েছে যে, এই পরিসংখ্যানে স্বস্তি বোধ করার সুযোগ নেই। বরং পরীক্ষার সংখ্যা অতি দ্রুত আরও অনেক বাড়ানো না হলে বেশ উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটবে।

পরীক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে; শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে—এই পরিসংখ্যান থেকে আমাদের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া সম্ভব।

প্রশ্ন হলো, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না কেন? সোজা উত্তর: নমুনার ঘাটতি। নমুনা সংগ্রহ ও সরবরাহ কম হচ্ছে বলেই পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, নমুনা সংগ্রহে ঘাটতি কেন? কী কারণে এত কম নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে? এই কাজে দক্ষ লোকবলের অভাব? সরঞ্জামের ঘাটতি? ব্যবস্থাপনা ও কাজের সমন্বয়ের দুর্বলতা? যা-ই হোক না কেন, সব ধরনের ঘাটতি দূর করতে হবে। অতি দ্রুত নমুনা সংগ্রহ ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। তাহলে যেমন রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে, তেমনই তাদের বিচ্ছিন্নকরণের মাধ্যমে রোগটির বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।