সম্পূর্ণ লকডাউনের বিকল্প নেই

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধের প্রথম উপায় মানুষে–মানুষে সংস্পর্শ এড়ানো। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরেও তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একাধিকবার ভুল করেছি। প্রথমত, গণপরিবহন বন্ধ না করেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ গণপরিবহনে গাদাগাদি করে ঢাকা ছেড়ে গেছে। ফলে সংস্পর্শ এড়ানোর উল্টো ঘটনা ঘটেছে। তারপর, পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলার পর আবার ফেরত যেতে বলার ফলেও বিপুলসংখ্যক মানুষ পরস্পরের সংস্পর্শে গেছে। লোকজনকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু শুরুর দিকে তা অনেকেই মানেনি।

অবশেষে, বেশ দেরিতে হলেও নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পর দোকানপাট বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মসজিদে জমায়েত না করে বাসায় নামাজ পড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও রাস্তাঘাটে এখনো অনেক লোকের চলাফেরা লক্ষ করা যাচ্ছে। 

এদিকে আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ের মুখোমুখি বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। রোগসংক্রমণ শনাক্ত হওয়া এবং মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ার তথ্যগুলো থেকেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা স্থানীয় সামাজিক পর্যায়ের সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। আমরা যদি এখনো সামাজিক দূরত্ব তথা মানুষে– মানুষে সংস্পর্শ এড়ানো নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হই, তাহলে খুব দ্রুত সারা দেশে করোনাভাইরাস মহামারি ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে।

সেই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এখনই মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পূর্ণ লকডাউন ছাড়া আর কোনো বিকল্প আমাদের সামনে নেই। কিন্তু সরকার এই শব্দটি ব্যবহার করছে না। সাধারণ ছুটি ঘোষণা, ভিড় বা সমাবেশ এড়ানো, ঘরে থাকার পরামর্শ—এই সমস্ত উদ্যোগের মধ্যে একধরনের ঢিলেঢালা ভাব রয়েছে। প্রতীয়মান হচ্ছে, সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা যথেষ্ট মাত্রায় সৃষ্টি হয়নি। প্রথম দিকে সরকারি তরফের হেলাফেলা এর জন্য বহুলাংশে দায়ী। পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তও বিপুলসংখ্যক মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। কিন্তু এখন আর আমাদের হেলাফেলা করার সুযোগ নেই; আর কোনো ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা চলবে না।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ লকডাউন ছাড়া কোনো বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। কী কী উপায়ে তা কার্যকর করা যেতে পারে, সেই পথ খুঁজতে হবে। প্রথমত, ঘর থেকে বের হওয়ার বিপদ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। জাতীয় গণমাধ্যমেই শুধু নয়, কমিউনিটি পর্যায়েও এটা করতে হবে। স্থানীয় সরকারের তৃণমূল স্তরের লোকজনকে এখন সক্রিয় হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ স্থানে স্থানে কারফিউ জারি করার পরামর্শ দিচ্ছেন; স্থান ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজন হলে এটাও ভেবে দেখা যেতে পারে। 

তবে পুরো লকডাউনের ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষের জীবন–জীবিকার কী হবে, সেই বিষয়টিকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না। কীভাবে তাদের কাছে খাবার ও সাহায্য পৌঁছানো যায়, সেই কৌশলও একই সঙ্গে নির্ধারণ করতে হবে। বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছানো ও মুঠোফোনের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ বিভিন্ন মহল থেকে দেওয়া হয়েছে। এরকম কিছু সিদ্ধান্তও জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে।