শিক্ষার্থীরা যখন ঘরে

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে সমগ্র জনজীবনে যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, শিক্ষাজীবনও তার বাইরে নেই। ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষাগুলোর ফল প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল মে মাসের শুরুতে; তা–ও বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা, গবেষণাসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তা ছাড়া, এ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পবিত্র রমজান শুরু হবে। ফলে একটা লম্বা সময় ধরে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।

যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে শারীরিক সুস্থতা ও জীবনের নিরাপত্তাই সবার প্রধান ভাবনার বিষয়, তবু শিক্ষার বিষয়টির প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা একান্ত প্রয়োজন। কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে অচলাবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের প্রায়–অপূরণীয় ক্ষতি হবে। 

তাহলে এখন আমাদের করণীয় কী? সরকারের করণীয় হলো এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য পরিকল্পনা করা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে সমন্বিত পরিকল্পনা করবেন। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, প্রতিবেশী ভারতসহ করোনা–আক্রান্ত দেশগুলো এই গুরুতর সংকটকালে জাতীয় জীবনের অন্যান্য দিকসহ শিক্ষাক্ষেত্রে সম্ভাব্য ধস লাঘবের জন্য কী ধরনের চিন্তা ও পরিকল্পনা করছে, আমাদের উচিত সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া। 

তবে শুধু সরকারি পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। শিক্ষার্থীদের নিজেদের, বিশেষত অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতা এখন ভীষণভাবে প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণের সুযোগ নেই, কিন্তু বাসায় পড়াশোনা করার সুযোগ অঢেল। এই দুর্যোগের সময়টাকে ছুটি ভেবে অপচয় করার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। যেসব মা–বাবার পক্ষে সম্ভব, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করা ও উৎসাহ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। ঘরে থাকার সময়টার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।

এই সময় ডিজিটাল যন্ত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি আসক্তি ভীষণভাবে বেড়ে যেতে পারে, মা–বাবাদের এদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত। কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণার কাজে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের এটাই মোক্ষম সময়। শুধু ক্লাসের পড়াশোনা ও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নয়, চিত্ত বিকাশের জন্যও বই পড়া, সুন্দর চলচ্চিত্র দেখাসহ নানা সৃজনশীলতা ঘরে থাকার এই সময়টাকে অর্থবহ করে তুলতে পারে।