ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনিবার্যতায় দেশজুড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। ফলে বিশেষত দরিদ্র জনগোষ্ঠী অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের মধ্যে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। রোববারের প্রথম আলোয় অন্তত চারটি জেলায় ত্রাণসাহায্যের দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন ইত্যাদির খবর প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এবং আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভাব প্রকটতর রূপ ধারণ করতে পারে।

অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির ফলে সরকারের পক্ষ থেকে শিল্প ও কৃষি খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষের যখন কোনো আয় নেই, তখন তাঁরা কীভাবে জীবনধারণ করবেন, সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার টিসিবির মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু করেছে। সরকারি প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও এ রকম কিছু কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কিন্তু খাদ্যসংকটের মুখোমুখি মানুষের সংখ্যা বিপুল; সে তুলনায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ত্রাণের পরিমাণ অপ্রতুল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

যেমন জামালপুর জেলার শরিফপুর ইউনিয়নে কয়েক শ ক্ষুধার্ত মানুষের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের ত্রাণসাহায্য প্রয়োজন, কিন্তু করোনা সংক্রমণের প্রথম সপ্তাহে তিনি মাত্র ৩১০ জনের জন্য ত্রাণ পেয়েছিলেন। মোটামুটি একই চিত্র সারা বাংলাদেশেই, যদিও সরকারি প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে।

ত্রাণ বরাদ্দ আরও অনেক বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ এবং এর সততা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। বিতরণ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার ঘাটতি থাকলে বিপুলসংখ্যক ক্ষুধার্ত মানুষের জীবনে দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়তে থাকবে। তার ফলে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ধিক্কারজনক বিষয় হলো, সরকারিভাবে বরাদ্দ চাল আত্মসাতের প্রচুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের অন্তত ছয়টি জেলায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের চার নেতাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; ৯৫ হাজার কেজি আত্মসাৎকৃত চাল উদ্ধার করা হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, এই মহামারির সময় দেশজুড়ে সরকারি চাল নিয়ে কী নির্মম অনৈতিকতার চর্চা চলছে। এগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে; সে জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে আর কেউ সরকারি চাল কিংবা ত্রাণসাহায্য আত্মসাৎ করার সাহস না পায়।

লকডাউন চলাকালে ক্ষুধার্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও স্বল্প মূল্যে চাল বিক্রয় কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। কারণ, এই কার্যক্রম পরিচালনার সময় সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘিত হচ্ছে, সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি বাড়ছে। সে জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে স্থানীয় সরকার কাঠামোর সহযোগিতায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীগুলোর সদস্যদের সহযোগিতা কার্যকর হতে পারে।