ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় সালিস

আমাদের সমাজে সালিসের নামে একশ্রেণির লোক অভিযোগকারী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতিকার না করে অভিযোগকারীকে রক্ষার চেষ্টা করে থাকেন। এ নিয়ে বিস্তর মামলা–মোকদ্দমা কিংবা অঘটন ঘটলেও সংশ্লিষ্টদের যে কোনো বোধোদয় হয়নি, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুরের ঘটনাই তার প্রমাণ। 

গত শুক্রবার ওই গ্রামের ৯ বছরের একটি মেয়ে বাবার জন্য পান কিনতে দোকানে গেলে দোকানদার রওশন আলী তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। মেয়েটি বাড়িতে গিয়ে বাবাকে ঘটনা জানালে তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি আবদুল মান্নানকে জানান। তিনি থানায় না গিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আবদুস সাত্তারসহ কয়েকজনকে নিয়ে একতরফা সালিস করেন। সালিসে ধর্ষণচেষ্টাকারী রওশনকে জুতার মালা গলায় দিয়ে ঘোরানো এবং মেয়েটির বাবাকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওই সালিসে মেয়েটির বাবাকে ডাকা হয়নি। 

প্রথম আলোতে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গুরুদাসপুর থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশ পেয়ে গুরুদাসপুর থানা-পুলিশ মেয়েটির বাড়িতে যায় এবং তার বাবাকে মামলা করতে বলেন। বাবা ধর্ষণচেষ্টাকারী রওশন আলীসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর পুলিশ সালিসে অংশগ্রহণকারী আবদুল মান্নান ও মানিক মিয়া নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করলেও রওশন আলীসহ অন্যরা পলাতক। 

দ্রুত মামলা নেওয়া এবং দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করায় আমরা গুরুদাসপুর থানা-পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে দাবি করব, রওশন আলীসহ অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হোক। বিশেষ করে মূল আসামি গ্রেপ্তার না হলে মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া এগোবে না। 

জমি বা আর্থিক লেনদেন নিয়ে কোনো বিরোধ হলে সব পক্ষের সম্মতিতে সালিস হতে পারে। কিন্তু ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির কোনো সুযোগ নেই। এসব অপরাধের বিচার হতে হবে ফৌজদারি আইনেই। 

গুরুদাসপুরের ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের উদ্বেগের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। সেই সঙ্গে এ ধরনের গুরুতর ফৌজদারি অপরাধকে যাতে কেউ সালিসের নামে ধামাচাপা দিতে না পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 

গুরুদাসপুরের শিশু ধর্ষণচেষ্টা ও কথিত সালিসের ঘটনায় অভিযুক্ত সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক।