বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস

আজ সারা বিশ্বে যখন মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হচ্ছে, তখন বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যমের ওপর চাপ ও ভয়ভীতি আমাদের যারপরনাই উদ্বিগ্ন করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জরিপ এবং মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে সারা বিশ্বেই গণমাধ্যমের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। আর যেসব দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রেস কাউন্সিলের আদেশ না মানলে সংবাদপত্র সর্বোচ্চ ৩০ দিন বন্ধ রাখতে খোদ আইন কমিশনের প্রস্তাবে আমরা স্তম্ভিত। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে আইন কমিশন ও বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ঐতিহ্যগতভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সুদৃঢ় করতেই ভূমিকা পালন করে থাকে। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সাফল্য ছিল ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন থেকে পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার কালাকানুন বাতিল করা। এ জন্য বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অস্থায়ী সরকার কৃতিত্ব দাবি করতে পারে।
এখন সিকি শতাব্দী পরে অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই প্রায় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই একটু ভিন্ন আঙ্গিকে হলেও পত্রিকা বন্ধের মতো বিধান পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব সামনে আনা হয়েছে। যদিও এটা স্বস্তির যে, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিজেই পরিষ্কার করেছেন, পত্রিকা বন্ধের মতো বিধান চালুর সুপারিশ তিনি সমর্থন করেন না। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে আইন কমিশন তাহলে কার পরামর্শে এমন বিধান জুড়ে দিল।
এটা অনস্বীকার্য যে, বাক্স্বাধীনতার অধিকারের রক্ষাকবচ অবশ্যই যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষেই নাগরিক ও সাংবাদিকেরা ভোগ করে থাকেন। কেউ সেই বিধিনিষেধ না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। গণমাধ্যমের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রেস কাউন্সিলকে অধিকতর শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তাও আমরা অস্বীকার করছি না। তাই বলে সেটা কেবল তার পুলিশি শক্তি বাড়ানোর ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না।
সাংবাদিক সমাজের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে যে কালাকানুন বাতিল হয়েছে, সেটি ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব যেমন গণমাধ্যমের ওপর আঘাত, তেমনি গণতন্ত্র ও সভ্যতারও পরিপন্থী। মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রত্যাশা সব ধরনের কালাকানুন, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বাধা ও হুমকির অবসান।