করোনাকালে চিকিৎসাসেবা

করোনায়ও মানুষ ভোগে এবং মারাও যায়, অন্য অনেক রোগও বসে নেই। সেসবও মানুষকে ভোগাচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুও ঘটছে। করোনা মোকাবিলায় অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে যাতে অন্যান্য অসুখ-বিসুখের শিকার হওয়া মানুষ চিকিৎসার সুযোগ না হারায়। কিন্তু লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব এবং যোগাযোগব্যবস্থার স্থবিরতা আছে, অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধও আছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য এটাও অনেক বড় সমস্যা। টেলিমেডিসিন এ সংকটকে কিছুটা লাঘব করতে পারে।

করোনাজনিত লকডাউনের শুরু থেকেই কিছু কিছু হাসপাতাল ও চিকিৎসক মুঠোফোনে অথবা অনলাইনের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দিতেন। রাজধানীতে কিছু বড় বেসরকারি হাসপাতালও এ সেবা চালু করেছে। এ ছাড়া চিকিৎসকদের বিভিন্ন কমিউনিটি ও অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা পোর্টাল এভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। করোনার বাধা যেহেতু দীর্ঘ হচ্ছে, সেহেতু সারা দেশের সংকটাপন্ন মানুষকে তো বটেই, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও এ সেবা আরও প্রসারিত হওয়া দরকার।

যেহেতু করোনা সামলাতে চিকিৎসাব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে, ক্ষেত্রবিশেষে ভেঙেও পড়েছে; সেহেতু হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বারে সরাসরি রোগী দেখার সুযোগ অনেক কমে গেছে। না কমে উপায়ও নেই। দ্বিতীয়ত, শারীরিক সংস্পর্শে থেকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে গেছে। তৃতীয়ত, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য রোগীরাও করোনার উপসর্গ গোপন করেন। এ তিন সমস্যার কিছুটা প্রতিকার টেলিমেডিসিন।

অনেক অসুখ আছে যা ভোগায় বটে, কিন্তু ঘরে বসেই চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন ওষুধে সেরে যেতে পারে। এমন সময় তাঁদের হাসপাতালমুখী না হওয়া দুদিক থেকেই ভালো। এতে করে চিকিৎসকেরা আরও জটিল রোগীর জন্য কাজ করার সুযোগ পাবেন, আবার রোগীরাও হাসপাতালে গিয়ে নিজের ও অপরের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াবেন না।

কিছু অসুখ আছে যার জন্য অপারেশন পরেও করা যেতে পারে; আপাতত ডাক্তারের পরামর্শমতো চলে উপকৃত হওয়া সম্ভব। গর্ভবতী নারীদেরও নিয়মিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ প্রয়োজন। এ ধরনের ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন অনেক উপকার করতে পারে। চিকিৎসকদের চেম্বারের নিয়মিত রোগীদেরও চিকিৎসকেরা মুঠোফোনের মাধ্যমে সেবা দিতে পারেন।

বড় অংশের রোগীরা এভাবে সেবা নিয়ে চললে হাসপাতালগুলোতে গুরুতর রোগীদের সরাসরি সেবা দেওয়ার ফুরসত ও পরিবেশ পাওয়া যাবে। টেলিমেডিসিন যেসব ক্ষেত্রে কার্যকর নয়, কেবল সেসব রোগীই হাসপাতালে আসবেন তখন। প্রয়োজন উপায়ের জননী, যখন কিছুই নেই তখন টেলিমেডিসিন একটা উপায়।