নারীদের রোজা ও বিশেষ আমল

ধর্ম
ধর্ম

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রথমে আদি পিতা হজরত আদম (আ.)–কে বানালেন। সৃষ্টির পূর্ণতার জন্য মানবমাতা বিবি হাওয়া (আ.)–কে সৃষ্টি করলেন। মানব সৃজন পূর্ণতা পেল। নারী ও পুরুষ জীবনের সর্বত্র একে অন্যের সম্পূরক ও সহায়ক। ইবাদত ও প্রতিদানে নারী ও পুরুষের রয়েছে যথাযথ যৌক্তিক অধিকার।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি কোনো বিশ্বাসী নারী বা পুরুষ সৎকর্ম করে, অবশ্যই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১২৪)। হাদিস শরিফে আছে: কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করেন, রমাদান মাসে পূর্ণরূপে রোজা পালন করেন, নিজের সম্ভ্রম ও ইজ্জত আবরু হেফাজত করেন এবং শরিয়াসম্মত বিষয়ে স্বামীর অনুগত থাকেন; তিনি জান্নাতের আটটি দরজার যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবেন। (আবুদাউদ)।

নারীরা রমজানে ফরজ রোজা পালন করার পাশাপাশি নিজেদের সোনাদানা, গয়না, টাকাপয়সা ও অর্থসম্পদের জাকাত প্রদান করবেন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সদকাতুল ফিতরও আদায় করেন। যদিও নারীর পক্ষে অন্য কেউ জাকাত ও ফিতরা আদায় করে দিলে তা–ও কবুল হয়ে যাবে। যেহেতু আর্থিক ইবাদতগুলো একজন অন্যজনের পক্ষ থেকে আদায় করতে পারেন।

নারীদের জন্য রয়েছে রোজা পালনে ও ইবাদতে বিশেষ কিছু বিধান। মায়েরা রোজা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে রোজার কোনো প্রকার ক্ষতি হয় না। নিজের সন্তান হোক বা অপরের সন্তান। এমনকি এমনিতে দুগ্ধ নিঃসরণ হলেও রোজার ক্ষতি হবে না। অনুরূপভাবে কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বা তরল বের হলে (তা যে পরিমাণই হোক না কেন) রোজার কোনোরূপ ক্ষতি হবে না। কারণ, রোজা শুধু পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারা বিনষ্ট হয়; অন্য কোনো কারণে নয়।

উল্লেখ্য, রক্ত বের হওয়া বা তরল ক্ষরণ হওয়া অজু ভঙ্গের কারণ; রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। তবে মহিলাদের রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব হলে রোজা ভঙ্গ হবে। এই রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে; কাফফারা আদায় করতে হবে না।

সন্তানসম্ভবা নারীকে যদি গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় বিজ্ঞ ও মুত্তাকি চিকিৎসক রোজা রাখতে বারণ করেন, তবে সে রোজা পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। মহিলারা রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব চলাকালে রোজা করতে পারবেন না। ওই রোজাগুলো পরে কাজা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া মিসরিয়া)

নারীদের ইতিকাফ তাঁদের বাসগৃহের নির্দিষ্ট কক্ষে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও একান্ত বিশেষ জরুরত ছাড়া ওই ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না। অজু, ইস্তিঞ্জা বা পাক পবিত্রতার জন্য বাইরে বের হলে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন না, বা সালাম কালাম করবেন না। কেউ সালাম দিলে তার জবাবও দেবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন এবং কেউ ভেতরে এলে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবেন। ইতিকাফ কক্ষে এমন কেউ অবস্থান করতে পারবেন, যঁারা ইতিকাফ করছেন না। ইতিকাফ কক্ষটি যদি শয়নকক্ষ হয় এবং একই কক্ষে বা একই বিছানায় অন্য যেকোনো কেউ অবস্থান করেন তাতেও কোনো ক্ষতি নেই; এমনকি স্বামীও পাশে থাকতে পারবেন। তবে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ ইতিকাফ অবস্থায় নিষিদ্ধ। এর দ্বারা ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ো না, যখন তোমরা ইতিকাফরত থাকবে মসজিদে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।

ইতিকাফের সময়সীমা কমপক্ষে এক দিন বা চব্বিশ ঘণ্টা। শুরু করতে হবে সূর্যাস্তের পূর্বে এবং তা পূর্ণ হবে পরের দিন সূর্যাস্তের পরে। ইতিকাফ আরম্ভ করে এক দিন পূর্ণ না করে ছেড়ে দিলে বা ইতিকাফ ভঙ্গের কারণ ঘটলে এর পরিবর্তে পূর্ণ এক দিন তা রোজাসহ কাজা আদায় বা পালন করতে হবে। যাঁরা রোজা পালনে অক্ষম, তাঁরা রোজা ছাড়াই ইতিকাফ করতে পারবেন। মহিলারা রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব চলাকালে রোজা করতে পারবেন না, আর রোজা ছাড়া ইতিকাফ হয় না।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক