দোকানপাট খুলে দেওয়া

বিশেষজ্ঞরা যখন বলছেন, মে মাসজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকবে, তখন সরকার দোকানপাট ও বিপণিবিতান চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বাড়ার লক্ষণ এরই মধ্যে পরিষ্কার। তিন দিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। গতকাল সর্বোচ্চ ৭৮৬ জন নতুন সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন। রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর ছাপা হয়েছে, ১০ মে থেকে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে।

এটা বোধগম্য যে জাতীয় অর্থনীতির আরও ক্ষতি এড়ানো এবং মানুষের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ যখন সর্বোচ্চ মাত্রায় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, ঠিক এই সময়ে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ঠিক হলো কি না; আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা যেত কি না। কারণ, দোকানপাট খোলা ও ব্যবসা-বাণিজ্য শুরুর ফলে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে পালনীয় স্বাস্থ্যবিধিগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ করানো কঠিন হবে।

সে জন্য এই পরিস্থিতিতে যাওয়ার আগেই কিছু বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তৈরি করা উচিত। চীন, ইতালি ও ইউরোপের যেসব দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে, সেখানে কোন স্থাপনায় একসঙ্গে কতজন মানুষ ঢুকতে পারবে, পরস্পরের থেকে কতটা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজকর্ম সারবে ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে এবং সেগুলো মেনে চলার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। আমাদের দেশেও একই পথ অনুসরণ করতে হবে; সবার জন্য অবশ্যপালনীয় নির্দেশনা তৈরি করে তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। দোকানপাটসহ প্রতিটি ব্যবসায়িক স্থাপনার কর্তৃপক্ষকে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে; অন্যথায় জরিমানা বা স্থাপনা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার মতো শাস্তিমূলক পদক্ষেপের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সরকার একটি নীতিমালা তৈরি করছে, সেখানে এই বিষয়গুলো যাতে বিবেচনায় নেওয়া হয়।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খোলার সময় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কার্যত তা ঠিকমতো মেনে চলা হচ্ছে না। এটা যথাযথভাবে তদারকিও হচ্ছে না। দোকানপাট ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হলে এ ক্ষেত্রেও যে একই পরিস্থিতি হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। এ জন্য তদারকির কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও জরুরি প্রশ্ন হচ্ছে, এই নজরদারির জন্য যে লোকবল প্রয়োজন, সরকারের কি তা আছে? স্থানীয় সরকার কাঠামো এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে কি না, তা ভেবে দেখা যায়। অর্থাৎ ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডের দোকানপাট ও ব্যবসায়িক স্থাপনাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে নজর রাখতে পারেন।

আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন, ঢাকাসহ যেসব শহরে সংক্রমণের মাত্রা বেশি হওয়ায় লকডাউন রয়েছে এবং মে মাসজুড়ে তা আরও জোরালো করা দরকার, সেসব শহরে দোকানপাট খোলার বিধিবিধান কী হবে? আমরা মনে করি, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ যেসব শহরে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি এবং তা প্রতিদিন আরও বাড়ছে, সেসব শহরের দোকানপাটসহ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনই খুলে দেওয়া ঠিক হবে না।

ইতিমধ্যে সরকারি ছুটি ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় ১০ মে থেকে সব দোকানপাট খুলে দিলে হঠাৎ করে বিপুল লোকসমাগম হতে পারে। মার্কেট, শপিং মল ইত্যাদির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতি কতটা সামাল দিতে পারবে, সেটা এক বড় প্রশ্ন।