সব সামর্থ্য কাজে লাগাতে হবে

শুরু থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢিলেঢালা ভাব, সিদ্ধান্তহীনতা ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় বিশৃঙ্খলা এখন চরমে পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে, এমন কথাই আমরা ধারাবাহিকভাবে শুনে আসছি। কিন্তু দিনে দিনে বাস্তব অবস্থা পরিষ্কার হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বের দেশগুলোতে কত দ্রুত ছড়িয়েছে এবং পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সেটা সংশ্লিষ্ট কারও অজানা থাকার কথা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে গত ১৬ মার্চ যে বার্তাটি দেওয়া হয়েছিল তা হচ্ছে ‘পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা’। সেই বার্তা উপেক্ষিত থেকেছে। এত জনগোষ্ঠী ও জনঘনত্বের দেশে পরীক্ষা খুবই সীমিত রেখে তার একক কর্তৃত্ব রোগতত্ত্ব ও রোগনিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা আইইডিসিআরের হাতেই আটকে রাখা হয়। আইইডিসিআর একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সারা দেশের সন্দেহভাজনদের করোনা পরীক্ষা করা এর কাজ নয়; প্রতিষ্ঠানটির সেই সক্ষমতাও নেই।

আমরা শুরু থেকেই বিষয়টির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। পরীক্ষা করার সামর্থ্য ও সক্ষমতা আছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে বলেছি। দেশে আইসিডিডিআরবির মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থাকতেও সরকার প্রথমে তাদের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি। সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘুম ভাঙে এবং তড়িঘড়ি করে অনেকগুলো পরীক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই মানসম্মত সরঞ্জাম, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মী না থাকায় পরীক্ষার কাজটি যথাযথভাবে হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে লোকবলের ঘাটতি থাকায় অনেক কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে রোগীর মৃত্যুর পর।

শুরু থেকে আইইডিসিআরের মতো একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো উচিত ছিল পরীক্ষার মাননিয়ন্ত্রণ, তদারকি, লোকবল প্রশিক্ষিত করার মতো কাজে। সেটা করা হলে এখন যেসব কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলো এড়ানো যেত। সংক্রমণের মাত্রা যখন উচ্চপর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন আইইডিসিআরকে নমুনা পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রথমবার সেখানে যাঁরা পরীক্ষা করিয়েছেন, তাঁরা বিপদে পড়েছেন। ফলে আগে যঁারা আইইডিসিআরে নমুনা পরীক্ষা করেছেন, দ্বিতীয়বার পরীক্ষার কাজটিও যদি তঁারা সেখানে করতে পারেন, তবে তাঁদের হয়রানি অনেক কমবে।

সংক্রমণের হার বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন দৈনিক অন্তত ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্ধারিত ৩৩টি পরীক্ষাকেন্দ্রে দিনে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে ৫ হাজার কিংবা তার কিছু বেশি। ফলে দ্রুত পরীক্ষা করার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন স্থানে বুথ খোলার চিন্তাভাবনা করছে। তবে পরীক্ষাকেন্দ্র বা বুথ বাড়ানোর পাশাপাশি সেগুলোর জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষার মান নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে।

আমরা শুরু থেকে বলে আসছি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করাতে হবে। সরকার বিলম্বে হলেও ব্র্যাককে নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত করতে যাচ্ছে, এটি ভালো খবর। স্বাস্থ্যসেবা খাতে আরও যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা কাজ করে, তাদেরও যুক্ত করা হোক। সরকারি–বেসরকারি সব সামর্থ্যকে একত্র করেই করোনা সংকট মোকাবিলা করতে হবে।