দুর্গতের বন্ধু ওঁরা সাতজন

পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির ৭ জন মিলে এই করোনা-দুর্যোগে একটা দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৭ ব্যক্তি মিলে নিজেদের বেতন থেকে নিজ জনগোষ্ঠীর অসহায় মানুষের জন্য নিয়মিতভাবে খাদ্য ও অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন। সবাই নিজে গ্রামে থাকেনও না। নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার পরও নিজেদের গ্রামের কথা ভেবেছেন তাঁরা, তাঁদের মনে দাগ কেটেছে অভাবের ছোবলে পড়ে যাওয়া মানুষদের কথা।

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ির জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কার্তিক ত্রিপুরার উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে এই তহবিল। তিনিই সবার মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের উদ্যোগ নেন। এই সাতজনের মধ্যে কেউই তেমন বড় চাকুরে নন, সীমিত সামর্থ্য কিন্তু হৃদয়টা তাঁদের প্রসারিত। তাঁরা কেউ শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত। প্রথম আলোর সংবাদে দেখা যায়, গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ভিটায় ত্রাণ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে রয়েছে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক লিটার সয়াবিন তেল ও একটি সাবান। এরপর সামাজিক দূরত্ব মেনে মানুষের হাতে এসব ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। ত্রাণের পাশাপাশি তরকারি কেনার জন্য প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে দেন।

শুরুতে ৭ জন হলেও এখন আর তাঁরা একা নন। গ্রামের অন্য সন্তানেরাও তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ত্রাণ ও নগদ টাকা দিচ্ছেন। ভবিষ্যতেও পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন অনেকে। প্রতিটি গ্রামে ও লোকালয়ে মানুষকে সাহায্য করার মতো সম্পদ অনেকেরই আছে, প্রতিটি এলাকায় তেমনি আছে করোনায় অভাবের শিকার পরিবার। উদ্যোগ নিলে সহমর্মিতা জানানোর মতো মানুষ পাওয়া যাবেই। এলাকায় এলাকায় উদ্যোগ নিলে, অবস্থাপন্নদের কাছে হাজির হলে কিছু না কিছু সহায়তা মিলবেই। দানশীলতা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশি সমাজের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য যেন বাজারি মানসিকতার কাছে হেরে না যায়।

সারা দেশে এ রকম অজস্র ক্ষুদ্র ও বড় উদ্যোগ আছে। যদি না থাকত, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতো। কেবল সরকারের মুখাপেক্ষী না থেকে তরুণ ও অবস্থাপন্নরা যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত মানুষকে ক্ষুধা থেকে বাঁচানো কঠিন বিষয় নয়। সবাই নিজ নিজ এলাকার দায়িত্ব নিলে কাজটি সহজ হয়ে যাবে। আমরা সেই সহৃদয় মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।