জ্বালানি তেল

করোনাসংকটে বিশ্বব্যাপী লকডাউন চলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ব্যারেল বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ৩০ ডলারের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বেশ কিছু দেশ এর সুযোগ নিতে চাহিদার বেশি জ্বালানি তেল মজুত করছে। কিন্তু বাংলাদেশ এই সুবিধা নিতে পারছে না অধিকসংখ্যক মজুতাগার না থাকার কারণে।

সোমবার প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশে ডিজেল, জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েল—তিন শ্রেণির জ্বালানির মজুত উপচে পড়ার মতো। রিজার্ভারে জায়গা খালি না থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরমুখী তিন জাহাজের নোঙরের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী ৬০ দিনের জ্বালানি মজুত থাকার কথা। কিন্তু আমাদের রিজার্ভারগুলোতে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের জ্বালানি মজুত রাখা সম্ভব। অবশ্য মহেশখালীতে কয়েকটি মজুতাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কাজ শেষ হলে বেশি পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুত করা যাবে।

২৬ মার্চ থেকে দেশে গণপরিবহনসহ প্রায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জ্বালানি তেলের চাহিদা অনেক কমে যায়। তবে চলতি মাসের প্রথম দিকে তৈরি পোশাকশিল্পসহ বেশ কিছু কারখানা চালু হয়েছে। ১০ মে থেকে সীমিত পর্যায়ে দোকানপাটও খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে জ্বালানির চাহিদা বাড়তির দিকে।

প্রশ্ন উঠেছে, করোনাসংকটে আন্তর্জাতিক বাজারে যে তেলের দাম কমেছে, তা থেকে আমরা কতটা সুবিধা আদায় করতে পারছি। মজুতাগারে ঘাটতির জন্য আমরা আমদানি বাড়াতে পারছি না। দ্বিতীয় যে সুবিধাটি বাংলাদেশ নিতে পারত, তা হলো অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে শিল্প ও কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ কমানো। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৫ টাকা এবং অকটেন ৮৯ টাকা। ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল এই দাম নির্ধারিত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় বিভিন্ন জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে বিপিসি এখন লিটারপ্রতি ১৩ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমে গেলেও এখানে কমানো হয় না। বিপিসি বর্তমানে লাভের কথা স্বীকার করলেও দাম না কমানোর পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছে, অতীতের লোকসান সামাল দিতে দাম অপরিবর্তিতই রাখতে হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠান হিসেবে হয়তো বিপি লাভবান হবে, কিন্তু তা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তেলের দাম কমে যাওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশে শিল্প উৎপাদন খরচ কমবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। জ্বালানি তেলের দাম কমলে শিল্প উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জ্বালানির দাম কমলে কৃষকদের সেচে সরকার যে ভর্তুকি দিচ্ছে, সেটিও কমে আসবে। জ্বালানির বেশি দাম রেখে ভর্তুকির পরিমাণ বেশি দেখানো শুভংকরের ফাঁকি ছাড়া কিছু নয়।

লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন গণপরিবহন বন্ধ ছিল। মালিকেরা লোকসান গুনেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে পরিবহন আবার 
চালু হবে, এ সময়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে তা গণপরিবহনের ভাড়ায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা মনে করি, জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি ও জনগণ। কেননা শিল্পের উৎপাদন খরচ কমলে বাজারে তার প্রভাব পড়বে, জীবনযাত্রার ব্যয়ও হ্রাস পাবে।