ভার্চ্যুয়াল কোর্ট

বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ ভার্চ্যুয়াল কোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে। আমরা এই যুগান্তকারী পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে এভাবে আদালত পরিচালনার বিষয়ে ভিন্নমত কম জোরালো নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনজীবীদের একটি অংশ এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, এর ফলে বৈষম্য তৈরি হবে। খুবই অল্পসংখ্যক আইনজীবী আর্থিকভাবে লাভবান হবেন আর সংখ্যাগরিষ্ঠই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একটি বৈশ্বিক মহাদুর্যোগের মধ্যে এই রকম সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটা কোনো বিচারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সার্ক, আসিয়ান অঞ্চলসহ বিশ্বের ৩০টি দেশের সুপ্রিম কোর্টের ওপর এক সমীক্ষা চালিয়ে আমরা দেখেছি, সীমিতভাবে, বিশেষ করে করোনা সংকট থেকে উদ্ভূত বিষয় শুনতেই প্রতিটি আদালত খোলা রাখা হয়েছে। কেউ এক মুহূর্তের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করেনি আদালত।

করোনা পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের একটি স্তম্ভ (বিচার বিভাগ) পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া ছিল একটি ব্যতিক্রম। তাই প্রধান বিচারপতি সীমিতভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দ্রুত একটি বেঞ্চ গঠন করেছিলেন। কিন্তু আইনজীবীদের অনেকের প্রচণ্ড বিরোধিতার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার কার্যকরতা স্থগিত করতে হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে ফুলকোর্টের সভায় ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত হয়।

আমরা মনে করি, ভার্চ্যুয়াল কোর্টকে পদ্ধতিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়মিত একটি ব্যবস্থা হিসেবে নিতে হবে। এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও মামলার জট নিরসন ও কতিপয় মামলার প্রতিকার দিতে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা থাকবে।

তবে এ ক্ষেত্রে আমরা মনে রাখব, আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি চালুসংক্রান্ত নতুন অধ্যাদেশটি ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালুর পথ সুগম করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা অত্যন্ত সীমিত অর্থে। আমরা আশা করেছিলাম, এই অধ্যাদেশের ফলে ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। অথচ নতুন অধ্যাদেশ কেবলই পক্ষসমূহের শারীরিক উপস্থিতিকে নিষ্কৃতি দিয়েছে মাত্র। যে অগ্রগতি হয়েছে, তার চূড়ান্ত খসড়া চার বছর ধরেই আইন মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় ছিল। এখন আইনমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, সাক্ষ্য আইন সংশোধন হওয়ার পর বিচারিক কাজগুলো শুরু করা যাবে। তখন আমাদের বিচারিক আদালত তথ্যপ্রযুক্তি মাধ্যম ব্যবহার করে ট্রায়াল, সাক্ষ্য গ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক শুনে রায় দিতে পারবেন।

আমরা আশা করব, ডিজিটাল রেকর্ডকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণসহ ভার্চ্যুয়াল কোর্টকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সার্থক মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার
জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতির পরে যখন আগের মতো আদালত চালু হবে, তখন ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালুর চলমান অগ্রগতি যেন থমকে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, প্রযুক্তিবিরোধী মহল এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্যোগ নিতে পারে।

সুতরাং আইনমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ‘নতুন অধ্যায়ের’ যে সূচনা, তার পরিকাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে সম্পূর্ণতাদানের দায়িত্ব সরকারকেই পালন করতে হবে।