প্রকৌশলীসহ কিছু হত্যাকাণ্ড

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (অঞ্চল-৪) নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে (৫০) হত্যার ঘটনা দেশের প্রকৌশলী সমাজসহ অনেককেই আলোড়িত করেছে। ১১ মে মিরপুরের বাসা থেকে গাজীপুরে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়ে তিনি আর গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। নিখোঁজ থাকার পরে ঢাকার তুরাগ অঞ্চলে তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। ১২ মে প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। করোনার আতঙ্কের মধ্যে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কারণ ও উদ্দেশ্য কী হতে পারে, তা জানা দরকার।

গণমাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের কার্যকারণ নিয়ে কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে নিহত ব্যক্তির পরিবারসহ একাধিক সূত্রের বরাতে দাবি করা হয়েছে যে ঠিকাদারদের পাওনা বিল নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের পেশাগত বিরোধ ছিল। ত্রুটিপূর্ণ কাজের বিল পাস করাতে চাননি বলে তিনি অনেকের বিরাগভাজন ছিলেন বলে এসব সূত্র দাবি করেছে। এমনকি ঘুষের প্রস্তাবও তিনি ফিরিয়ে দেন বলে বলা হয়েছে। সাধারণভাবে তিনি ওই এলাকায় সততার জন্য পরিচিত ছিলেন। যেকোনো হত্যাকাণ্ডই ঘৃণ্য এবং অপরাধীদের শাস্তিই একমাত্র কাম্য। তারপরও কথা থাকে, যদি নীতিগত কারণে একজন প্রকৌশলী হত্যার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে নীতির স্বার্থেই অপরাধীদের দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাওয়া জরুরি। না হলে পেশাগত সততা রক্ষা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে আরও প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রকৌশলী হত্যার ঘটনাটিকে তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট তদন্তকারীদের বিশেষ যত্নের সঙ্গে তদন্ত করার আহ্বান জানাই।

করোনার সময়ে সাধারণ অপরাধ অনেক কমে গেলেও, বিশেষ অপরাধ ঘটছে। বিশেষ করে গাজীপুরে এই মে মাসেই বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ৯ মে অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেয়ে অপরাধীরা হত্যা করেছে ৬ বছরের শিশুকে। গত শনিবার ৭ বছরের আরেকটি শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে। পুলিশের ধারণা, শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এই গাজীপুরেই গত ২৮ এপ্রিল মোবাইল চুরি করতে গিয়ে এক কিশোর হত্যা করে একই পরিবারের চারজনকে, যাদের মধ্যে ছিল দুজন কিশোরী; তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।

ওপরের ঘটনাগুলোর পরিষ্কার ইঙ্গিত, গাজীপুরে মারাত্মক অপরাধের বিস্তার করোনার সময়েও থেমে নেই। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে অবশ্যই করণীয় আছে, বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।