শিশুদের টিকাদান

করোনা সংকটের কারণে অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে মা ও শিশুদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা। গত দুই মাসে শিশুদের নিয়মিত টিকাদানের হার ১০ শতাংশ কমে যাওয়ার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল-মে দুই মাসে প্রায় আড়াই লাখ শিশু নিয়মিত টিকা পায়নি। ইউনিসেফের মতে, সংখ্যাটি ২ লাখ ৪১ হাজার। স্বাভাবিক সময়ে দেশে টিকাদানের হার ছিল ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ। গত দুই মাসে তা কমে ৮০-৮৪ শতাংশে ঠেকেছে।

তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই সময়ে যেসব শিশু বাদ পড়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনা মেনে তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বুধবার নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শিশুদের নির্দিষ্ট সময়ে টিকা দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

 মৌখিক আহ্বান কিংবা আশ্বাসে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। দুই মাসের বাদ পড়া শিশুদের হিসাব কষতে কষতে আরও এক মাস শেষ হতে চলেছে। করোনাকালে যেসব কারণে টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, সেগুলো অপসারণ করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়তি লোকবল নিয়োগ করা হোক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ১ লাখ ২০ হাজার কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয়। বহু কেন্দ্রের কার্যক্রম চলে স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা স্থানীয় কোনো ব্যক্তির বাড়িতে। করোনার সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সেটি সম্ভব হয়নি।

গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখ ২০ হাজার শিশু মারা যায়। ইউনিসেফের শঙ্কা, টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ার কারণে আগামী ছয় মাসে বাড়তি ২৮ হাজার শিশুর মারা যেতে পারে। যেকোনো মূল্যে এটি ঠেকাতে হবে। কোনো শিশুকে টিকাদান কর্মসূচির বাইরে রাখা যাবে না।

এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে যা যা করা প্রয়োজন, কর্তৃপক্ষকে তা করতে হবে। আর এ কাজে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার একটি বড় দায়িত্বই তারা পালন করে থাকে।

তবে দেখতে হবে টিকা গ্রহণকারী শিশু ও তাদের অভিভাবকেরা যেন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে না পড়েন। এ ক্ষেত্রে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।