রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণে পরিচ্ছন্নতা ও বিশেষ পোশাক

আল্লাহ তাআলা সবকিছুর স্রষ্টা ও নিয়ন্তা। তিনিই জীবন ও মৃত্যুর মালিক। তাঁর বিধান অনুসরণই আমাদের সুরক্ষার পথ। বিপদ–আপদ ও বালামসিবত উত্তরণে ইসলামে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৪৫)। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ বেহেশতের চাবি, পবিত্রতা নামাজের চাবি।’ (মুসনাদে আহমাদ)। 

যথানিয়মে অজু করা শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতা এবং পরিষ্কার–পচ্ছিন্নতার জন্য অতি জরুরি ও বিশেষ উপকারী। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের জন্য নতুন অজু করা সুন্নাত। এ ছাড়া সব নফল নামাজের জন্যও অজু করা সুন্নাত। খাবার গ্রহণের আগে অজু করা সুন্নাত। অজু করে ঘুমানোও একটি সুন্নাত। ঘুম থেকে উঠে অজু করাও সুন্নাত। মলমূত্রত্যাগের পরও অজু করা সুন্নাত। সর্বদা অজু করা অবস্থায় থাকা সুন্নাত আমল। হাদিস শরিফে আছে, ‘অজু মুমিনের অস্ত্র।’ (বায়হাকি)। 

অজুর অসাধারণ সুন্নাতটি নিয়মিত আমল করলে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ বার অজু করার মাধ্যমে হাত–পা ধোয়া হয়। এতে একদিকে সুন্নাত আমলের সওয়াব পাওয়া যায়, অন্যদিকে রোগব্যাধির ঝুঁকি থেকেও মুক্ত থাকা যায়। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘তাদের মাঝে রয়েছে এমন বান্দা, যারা পবিত্রতাকে পছন্দ করে আর আল্লাহ তাআলা পবিত্রদিগকে ভালোবাসেন।’ (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ১০৮)। 

 পোশাকের বিষয়ে সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাকের উপকারিতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তোমাদের সম্ভ্রম নিবারণ ও বেশভূষার জন্য তোমাদিগকে পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং সাবধানতার পরিচ্ছদই সর্বোৎকৃষ্ট। ইহা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২৬)। বিশেষ অবস্থায় বিশেষ সুরক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের পোশাকের নির্দেশনাও রয়েছে আল–কোরআনে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি তাঁকে (দাউদ আ.) তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা তোমাদের যুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে না?’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ৮০)। 

মসজিদে যাওয়ার সময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন পোশাক পরার বিশেষ নির্দেশ রয়েছে কোরআন হাকিমে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা পরিচ্ছন্ন পরিচ্ছদ পরিধান করবে, পানাহার করবে কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। বলো, “আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যেসব সুন্দর জিনিস ও পবিত্র জীবিকা সৃজন করেছেন, কে তা হারাম করেছে?”’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৩১-৩২)।

পোশাক পবিত্র রাখার নির্দেশ সরাসরি কোরআন মাজিদেই রয়েছে। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবীজি (সা.)–কে লক্ষ করে বলেন, ‘তুমি তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো, অপবিত্রতা পরিহার করে চলো।’ (সুরা-৭৪ মুদ্দাচ্ছির, আয়াত: ৪-৫)। নবী করিম (সা.) সব সময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন। তিনি বিশেষ বস্তুকে বিশেষ পদ্ধতিতে পরিষ্কার করতেন। তাঁর একখানা চামড়ার দস্তরখান ছিল, তা তিনি মাঝেমধ্যে আগুনে সেঁকে পরিষ্কার করতেন। (তিরমিজি ও মুসলিম)। তিনি জুতা ও মোজা পরিধানের পূর্বে ও খোলার পরে ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করতেন। বিশেষ বিশেষ সময়ে তিনি বিশেষ বিশেষ পোশাক পরতেন এবং পোশাকে বিশেষ বিশেষ অনুষঙ্গ যুক্ত করতেন। যেমন তিনি সব সময় ছোট পাগড়ি পরতেন, জুমার দিনে মাঝারি পাগড়ি পরতেন এবং ঈদে ও বিশেষ দিনে বড় পাগড়ি পরতেন। মসজিদে গমন ও জুমার জন্য তিনি বিশেষ পোশাকের নির্দেশনাও দিয়েছেন, ‘তোমরা জুমার জন্য ও মসজিদের জন্য দুটি কাপড় আলাদা করে রাখো।’ (বায়হাকি)।

শোবার ঘর পরিপাটি ও বিছানা–ছাদর ইত্যাদি ধুয়ে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা সুন্নাত। প্রতিবার শোয়ার আগে বিছানা–চাদর ইত্যাদি ঝেড়ে পরিপাটি করা সুন্নাত। ঘরের প্রতিটি কক্ষ ও প্রতিটি কোণ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। এমনকি ঘরের আঙ্গিনা ও বাড়ির আশপাশও পরিষ্কার রাখতে বলেছেন মহানবী (সা.)। 

রোগ প্রতিরোধে মানসিক শক্তি ও দৃঢ় মনোবল বিশেষ সহায়ক। সুন্নাত আমল ও আল্লাহর ওপর নির্ভরতার মাধ্যমেই তা অর্জন করা সম্ভব। 

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক 

smusmangonee@gmail,com