কোরবানির পশুর হাট

প্রতিবছর ঈদুল আজহা বা কোরবানি আসে উৎসবের আমেজ নিয়ে। এই দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সাধ্যমতো পশু কোরবানি দেন এবং এর মাংসের একটি অংশ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা হজব্রত পালন করেন। কিন্তু এবার করোনা সংকটের কারণে বিদেশি হজযাত্রীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সৌদি সরকার। সেখানে মাত্র ১ হাজার মুসল্লির উপস্থিতিতে প্রতীকী হজ উদ্‌যাপিত হবে।

এদিকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার উপায় সঙ্গনিরোধ তথা মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলা। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর হাটের আয়োজন জনমনে উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশ্ন হলো যেখানে কাঁচাবাজার কিংবা শপিং মলগুলোতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যাচ্ছে না, সেখানে পশুর হাটে সম্ভব হবে কি না, তা–ও বিবেচনার দাবি রাখে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আবাসিক বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বা শহরের কেন্দ্রস্থলে পশুর হাট বসানো হবে না। তাঁর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়। আবাসিক এলাকার বাইরে খেলার মাঠ বা যেখানেই পশুর হাট বসবে, সাময়িক হলেও সেখানে লোকসমাগম বাড়বে। প্রতিটি হাটে যে প্রচুরসংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা ভিড় জমাবেন, তাঁদের স্বাস্থ্যবিধি মানানো বিরাট কর্মযজ্ঞ। প্রয়োজনীয় মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার সরবরাহের পাশাপাশি বর্ধিত লোকবলেরও প্রয়োজন হবে। সেই সামর্থ্য ও লোকবল সিটি করপোরেশনের আছে কি?

মেয়র আতিকুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, হাট ইজারার টাকার চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আশা করি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কিংবা অন্যান্য হাটের আয়োজক সংস্থাও অনুরূপ মনোভাব পোষণ করবে। মানুষ বাঁচানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ফলে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করে কোরবানির পশুর কেনাবেচা করা যায়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। কোরবানির সঙ্গে মুসলমানদের ধর্মীয় বিধান পালনের বিষয়টি যেমন রয়েছে, তেমনি কোরবানির বাজারের কথা ভেবে যে লাখ লাখ খামারি পশু পালন করে থাকেন, তাঁদের জীবিকার প্রশ্নও আছে।

এই প্রেক্ষাপটে ভার্চ্যুয়াল পশুর হাটই উত্তম বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে। এটি একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যেখানে অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোরবানির পশুর ক্রেতা ও বিক্রেতারা একসঙ্গে মিলিত হবেন। বিক্রেতা গরু, ছাগল বা কোরবানির উপযুক্ত পশুর স্থিরচিত্র বা ভিডিও দেখাবেন। গরুর দাম, বয়স, ওজন, কয়টা দাঁত রয়েছে, কোথা থেকে আনা হয়েছে, এমন সব তথ্য থাকবে। কোরবানির হাটে গিয়ে ক্রেতা যেভাবে গরু যাচাই-বাছাই করে থাকেন, ঠিক সেভাবেই দেখা যাবে। পছন্দ হলে ক্রেতা গরু কিনবেন। টেলিফোনে অর্থ স্থানান্তর এবং ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে দাম পরিশোধ করা যাবে। ক্রেতা যেখানে চাইবেন, সেখানেই গরু পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

গত বছর থেকেই বেশ কিছু সংগঠন অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে। এবার আরও বেশি সংগঠন বা প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হচ্ছে। আমরা মনে করি, যত বেশি অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়–বিক্রয় হবে, মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি তত কমবে। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।