বাড়িতে প্রসবের ঝুঁকি

মহামারি কেবল প্রাণ হরণই করে না, নতুন প্রাণের আগমনকে কঠিন করে তোলে। করোনাভাইরাসের হুমকির মধ্যেও সন্তান জন্ম নিচ্ছে। নারী ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ও লোকবল করোনা সংকটে বিপর্যস্ত। ফলে অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় বাড়িতে প্রসবের হার বেড়েছে আগের চেয়ে ২৩ শতাংশ।

সংখ্যাটার ব্যাপকতা মা ও শিশুস্বাস্থ্যের ঝুঁকির মাত্রা নির্দেশ করে। এমনিতেই মহামারির সঙ্গে পেরে না ওঠা স্বাস্থ্যব্যবস্থা মাতৃস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে পারবে না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। কোনো প্রসূতির বাড়িতে সন্তান প্রসব যদি অনিবার্যই হয়, তাহলে বাড়িতেই নিরাপদ প্রসব এবং তার আগে ও পরের সেবা পাওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে। মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার দিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের নজরের অভাব গ্রহণযোগ্য নয়।

শুধু হাসপাতাল, ক্লিনিক, কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসবের সুযোগই কমে যায়নি, শিশুদের টিকাদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে মা ও শিশুদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা। গত দুই মাসে শিশুদের নিয়মিত টিকাদানের হার ১০ শতাংশ কমে যাওয়ার সংবাদটি খুবই উদ্বেগজনক।

চিত্রটা তুলে ধরেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট। গত মাসে তারা বলেছে, করোনার কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে আগামী ছয় মাসে শিশু ও মাতৃমৃত্যু বাড়তে পারে। এসব দেশে পরিবার পরিকল্পনাসেবা প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এর ফলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমবে। বাড়বে অনিরাপদ গর্ভপাত। আর প্রসব–পূর্ব ও প্রসব–পরবর্তী সেবা কমে যেতে পারে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ করে।

বাস্তবে তাই ঘটছে। বাংলাদেশে গত বছর এপ্রিলে একবার প্রসব–পূর্ব সেবা পেয়েছিলেন ৪২ হাজার ৫৭১ জন গর্ভবতী। এ বছর পেয়েছেন ১৮ হাজার ৬২ জন। গবেষকেরা বলেছেন, চারটি কারণে সেবা কমেছে: মাতৃস্বাস্থ্যসেবায় জনবল কমেছে, সেবাসামগ্রী সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে, সেবা নেওয়ার চাহিদা কমেছে এবং সেবা ব্যবহারের সুযোগ কমেছে।

এটা বিশ্বস্বীকৃত ব্যাপার যে বাংলাদেশের শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যসেবার মান আধা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ঈর্ষণীয়। করোনা পরিস্থিতির চার মাস পেরোতে চলল। এত দিনেও প্রস্তুতির অভাবের অজুহাত যুক্তির বিচারে টেকে না। আমাদের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ এত এত প্রতিষ্ঠান তাহলে কী করে?