ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

বিভিন্ন জাতীয় জরিপে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয়তার দৌড়ে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তুলনায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক পিছিয়ে আছেন। জো বাইডেন শুধু এগিয়ে আছেন তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তাঁর মতো জোরালো অবস্থান কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী উপভোগ করতে পারেননি।

কিন্তু কথা হচ্ছে জো বাইডেনের এ শক্ত অবস্থান টেকসই হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, ট্রাম্পের যেমন একটি সলিড ইলেকটোরাল বেস বা কট্টর সমর্থক ভিত্তি আছে, জো বাইডেনের তা নেই।

ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকদের নিয়ে এ পর্যন্ত যথেষ্ট লেখালেখি হয়েছে। তাঁদের সংখ্যাও কম নয়। তাঁরা মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ। এই সমর্থকদের অনেকে কাণ্ডজ্ঞানহীন লোক বলে আখ্যায়িত করছেন। অনেকে তঁাদের ফালতু শ্রেণির লোক বলতেও ছাড়ছেন না। একের পর এক আক্রমণের শিকার হওয়ার পরও ট্রাম্পের এই সমর্থকেরা কিন্তু ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের আনুগত্য থেকে সরে যাননি।

তাঁরা জোরালোভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন, কারণ এখনো তাঁরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নীতি ও কাজকারবারের প্রতি আস্থা রাখা যায়। এই সমর্থকেরা চান মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলা হোক এবং অভিবাসন আইন কার্যকর হোক। পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে বরাদ্দ কমানোর বিরুদ্ধে তাঁরা অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা চান কর কমানো হোক, তঁাদের অর্থকড়ির ওপর সরকারের নজরদারি কমুক, আমেরিকার সেনাবাহিনী আরও শক্তিশালী হোক এবং বিচারপতিরা আরও রক্ষণশীল হোক।

এই সমর্থকদের বেশির ভাগ মনে করেন, ট্রাম্প যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার বেশির ভাগই তিনি পূরণ করেছেন এবং বাকিটুকু পূরণ করার জন্য আগামী নির্বাচনে তাঁকে জয়যুক্ত করা দরকার। এই সমর্থকেরা শুধু মুখে মুখে ট্রাম্পকে সমর্থন জানাচ্ছেন না, ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিয়ে ট্রাম্পের হাতকে শক্তিশালী করার মানসিকতা তঁাদের মধ্যে পুরোপুরি আছে।

অন্যদিকে জো বাইডেন হয়তো অধিকাংশ আমেরিকানের সমর্থন টের পাচ্ছেন। কিন্তু আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে এই সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে আনার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা কি তঁার আছে? নিবন্ধিত ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতে চালানো জরিপে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ধস দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভোটারদের এ অবস্থান সেপ্টেম্বরেই পাল্টে যেতে পারে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, নানা কারণে নির্বাচনের আগে আগেই ট্রাম্পের জনসমর্থন বেড়ে যেতে শুরু করবে। এখন পর্যন্ত যাঁরা ট্রাম্পের প্রতি বিরক্ত হয়ে জো বাইডেনকে ভোট দেবেন বলে বলছেন, তাঁরা নির্বাচনের ঠিক আগে ঘুরে যেতে পারেন।

এ মুহূর্তে ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালের সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি কাটাচ্ছেন। করোনাভাইরাস মহামারি, অর্থনৈতিক ধস এবং বর্ণবাদভিত্তিক ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ—এসব মিলিয়ে তিনি নজিরবিহীন চাপে রয়েছেন। গ্যালাপের জরিপে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৩০ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদে যোগ্য মনে করে। তবে এ সংখ্যাটা যদি নির্বাচনের আগে ৪০-এ উঠে আসে, তাহলে পুরো চিত্র বদলে যেতে পারে।

চার মাস ধরে জো বাইডেন সবার দৃষ্টির আড়ালে রয়েছেন। সভা-সমাবেশে নেই। এ অবস্থা আরও চার থেকে ছয় সপ্তাহ চলতে পারে। আগস্টের শেষের দিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেছে নেওয়ার সময় তাঁকে সমাবেশে আসতে হবে। তা–ও বেশির ভাগ সমাবেশ হবে ভার্চ্যুয়াল। বর্তমানে জো বাইডেন ডেলাওয়ারের নিজ বাড়িতে বসে জুম কলের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন এবং নির্বাচনের খরচের তহবিল সংগ্রহের জন্য দাতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। গত তিন মাসে সাংবাদিকদের সামনে না আসার কারণে ভোটারদের মনে তিনি তেমন দাগ কাটতে পারেননি।

জো বাইডেন আগামী নির্বাচনকে ট্রাম্প বনাম জো বাইডেনের লড়াই না বানিয়ে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির গণভোট বানাতে চান। অর্থাৎ, বাইডেন চান এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হোক, যেখানে আমেরিকান ভোটাররা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট রাখা ঠিক হবে নাকি ভুল হবে, সেই মর্মে সিদ্ধান্ত নিক। তিনি হয়তো ভাবছেন, ভোটাররা ‘হ্যাঁ ভোট’ এবং ‘না ভোট’ হিসেবে এই নির্বাচনকে দেখবে। অনেকের ধারণা, যাঁরা ট্রাম্পের কাজে বিরক্ত, তাঁরা তাঁর বিরোধিতা করার জন্যই জো বাইডেনকে ভোট দেবেন। বাইডেনও তঁাদের ভোটব্যাংক বলে মনে করছেন। কিন্তু অবস্থা বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ট্রাম্প সামনাসামনি বিতর্কে যে খুবই পারঙ্গম, তা গত নির্বাচনে হিলারির সঙ্গে বিতর্কের সময় স্পষ্ট হয়েছে। জো বাইডেনের সঙ্গে সামনাসামনি বিতর্ক শুরু হলে ট্রাম্প সেই পুরোনো স্টাইলে আক্রমণ চালাবেন বলে ধারণা করা যেতে পারে। ট্রাম্পের সেই কাঠখোট্টা কথাবার্তা ও জাতীয়তাবাদী ভাষ্য দক্ষিণপন্থীদের দারুণভাবে উজ্জীবিত করে। শেষ মুহূর্তে তাঁরাই সব হিসাব–নিকাশ পাল্টে দিতে পারেন।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
ম্যাট ম্যাককোইয়্যাক: নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা বিশেষজ্ঞ