তথ্য কমিশনের শুনানি বন্ধ

রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনার উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন চালু করা হয়েছিল। তবে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা শুরু থেকেই জনগণকে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা কমিশনে আপিল করে প্রতিকার পেয়েছেন। দায়িত্বে অবহেলার কারণে অনেক সরকারি কর্মকর্তাকে শাস্তিও দিয়েছেন তঁারা।

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯–এর ধারা ৮(১) অনুযায়ী, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্ট এবং অন্য দেশের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে, এমন তথ্য ছাড়া যেকোনো তথ্য আবেদনকারীকে সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। আবেদনের পর ২০ কার্যদিবসের মধ্যে এটি সরবরাহ করার কথা।

 প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি ঢাকার ধামরাই উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত ও কেনাকাটা–সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য না পেয়ে তিনি তথ্য কমিশনে আপিল করেন। গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের ৩০টি দপ্তরে ৩৭টি আবেদন করা হয়। এসব দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো তথ্য না দেওয়ায় ৬ জানুয়ারি তথ্য কমিশনে ১৬টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল ৬টি অভিযোগের শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সাধারণ ছুটি থাকায় সেই শুনানি হতে পারেনি। ৩০ জুন তথ্য কমিশন কার্যালয় খোলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আবেদনের শুনানি হয়নি। একই কারণে যুগান্তর–এর পক্ষ থেকেও দায়ের করা তিনটি অভিযোগেরও শুনানি হয়নি।

এ ব্যাপারে তথ্য কমিশন সচিব সুদত্ত চাকমা শিগগিরই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল শুনানি করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। অক্টোবর থেকে জুলাই। ইতিমধ্যে আট মাস পার হয়ে গেছে। তথ্য পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? এক–দুটি উপজেলায় যদি এতগুলো আবেদন শুনানির অপেক্ষায় থাকে, তাহলে সারা দেশে কত অভিযোগ শুনানির অপেক্ষায় আছে, অনুমান করা কঠিন নয়।

আশা করি, তথ্য কমিশন দ্রুততার সঙ্গে শুনানি শেষ করে জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করবে। যেসব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা তথ্য দিতে গড়িমসি করেন, তঁাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে তথ্য আবেদনকারীদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে।