করোনায় ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা

প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি অসচেতন অংশ এবং ভুয়া সনদ প্রদানকারী হাতে গোনা কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যৌথ অনিয়ম ও অসাবধানতার কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি একটা সংকটে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ কঠিন নয়। প্রবাসীকল্যাণ, বিমান চলাচল এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ জন্য সম্মিলিতভাবে যথা পদক্ষেপ নিতে হবে।

যেকোনো মূল্যে হোক বিদেশগামী, বিশেষ করে যাঁরা প্রবাসী শ্রমিক, তাঁদের সচেতন করা সবচেয়ে জরুরি। নির্দিষ্ট করা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যাঁদের কাছ থেকে কোভিড-১৯ নেগেটিভ অর্থাৎ এ রোগমুক্ত থাকার সনদ নেওয়া হবে, সেসব প্রতিষ্ঠান যাচাইয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। সনদ দুই স্তরে পরীক্ষিত হতে পারে। প্রথমত, টিকিট ইস্যু করার আগে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো অনলাইনে সনদগুলোর সত্যতা যাচাই করে নেবে। দ্বিতীয়বার বিমানবন্দরের অভিবাসন কর্মকর্তারা ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় সনদ পুনঃপরীক্ষার সুযোগ পাবেন। কিছুদিন এ রকম দ্বৈত যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে গেলে আমরা বিশ্বাস করি, প্রবাসী শ্রমিকসহ বিমানযাত্রী মাত্রই সনদ সংগ্রহে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন।

আপাতত সন্দেহভাজন মাত্র কয়েকটি অসাধু ক্লিনিক ও হাসপাতালের দেওয়া জাল সনদের কারণে কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি যাত্রীরা সংকটে পড়েছেন। বাংলাদেশের বিমানবন্দর পার হয়ে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা কয়েকটি দেশ নিষিদ্ধ করেছে। সামগ্রিকভাবে এক আস্থার সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। 

তবে বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিমান সম্প্রতি দুবাই ও আবুধাবি গেছে। এ পর্যন্ত সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলোর মধ্যে আছে ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন। সব দেশই বাংলাদেশের মর্যাদাসম্পন্ন উন্নয়ন অংশীদার। তারা বাংলাদেশের প্রতি কোনো কারণ ছাড়াই অযথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। করোনা সংক্রমণের ভয়ে সব দেশই এ ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করছে। এখানে কোনো দেশই ছাড় দিতে রাজি নয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে যেকোনো ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদেরও একইভাবে সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে। 

আমরা অবশ্যই লক্ষ করব যে বিশ্বের বহু দেশ প্রধানত নেতৃত্ব ও সুব্যবস্থাপনা দিয়ে অতিমারির পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ সেটা পারেনি। আমরা করোনাকালের শুরুতেই বলেছিলাম, এটা আর দশটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারা বা কম ভালোভাবে করতে পারার মতো বিষয় হবে না। এ মুহূর্তে সরকার কেবল প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যাই হয়তো বড় করে দেখছে, তাই সেটাই সামাল দিতে সচেষ্ট রয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এর সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকবে। করোনার আগে যাঁরা উড়োজাহাজ ভর্তি করে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন, তাঁদের অনেকেরই ফিরে আসার ব্যাপারটি কিন্তু বাংলাদেশের সার্বিক করোনা ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। পর্যটন খাত পুনরুজ্জীবন এবং তার আরও বিকাশ কিংবা বিদেশে শ্রমবাজারের আরও সম্প্রসারণের সঙ্গেও এ বিষয়ের একটি যোগসূত্র থাকবে। 

বিদেশগামী সব ফ্লাইটে এখন করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটা হয়তো পরিস্থিতি উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে যেকোনো ফ্লাইটে যাত্রী ওঠানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে সব ধরনের সতর্কতা নিতে হবে। দীর্ঘ সময় বিমান চলাচল বন্ধ থাকার পর এখন সীমিত পরিসরে তা চালু হচ্ছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের আস্থার সংকট না থাকে, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সংশ্লিষ্ট দেশ ও কর্তৃপক্ষকে দ্রুত অবহিত করতে হবে। বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিমান ও সবুজ পাসপোর্টের মান–মর্যাদার বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।