পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্য

ঢাকা বলতে একসময় পুরান ঢাকাকেই বোঝাত। পাকিস্তান আমলে ঢাকা উত্তরে সম্প্রসারিত হয়, যা নতুন ঢাকা নামে পরিচিত। স্বাধীনতার পর ঢাকার পরিধি আরও বেড়ে যায়। এতে পুরান বা আদি ঢাকার জৌলুশ কিছুটা কমলেও এখনো ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

পুরান ঢাকায় যে হাজার হাজার উদ্যোক্তা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন, তার পুরোটাই নিজস্ব উদ্যোগ ও চেষ্টায়। তাঁদের বেশির ভাগ ব্যাংকঋণ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। তাঁরা নিজস্ব পুঁজি দিয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং উত্তরোত্তর তার শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। অতীতে কোনো প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক দুর্যোগ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের কখনো কাবু করতে পারেনি।

কিন্তু গত মার্চে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের যে প্রাদুর্ভাব ঘটল, তা আরও অনেকের সঙ্গে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করেছে। গত বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী নেতাদের কথায় তারই প্রতিধ্বনিত শোনা গেল।

পুরান ঢাকার উদ্যোক্তারা যেহেতু ছোট ছোট শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকেন, সেহেতু তাঁরা প্রধানত প্রতিদিনের পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। আজকের পণ্য বিক্রি করে তাঁরা কাল কারখানা বা ব্যবসা চালানোর পুঁজি জোগাতেন। কিন্তু করোনার কারণে গত চার মাস তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি স্থবির হয়ে আছে। ব্যবসা–বাণিজ্য বরাবরই একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত। এসব ছোট কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বড় কারখানা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মেটাত। করোনার কারণে সেগুলোও বন্ধ ছিল। অনেকগুলো এখনো বন্ধ আছে।

এ অবস্থায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা যে মহাবিপদে পড়েছেন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকলেও প্রিপেইড মিটারের কারণে অনেকে আগাম বিদ্যুৎ বিল শোধ করেছেন। অনেকের পুরো সময়ের বিল ও ভ্যাট-ট্যাক্স বাকি পড়েছে। সংকট উত্তরণে ব্যবসায়ীরা বকেয়া ভ্যাট–ট্যাক্স ও গ্যাস–বিদ্যুতের বকেয়া বিল আগামী বছর কিস্তিতে শোধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে চলতি বছরের বাকি সময়টাও এসব বিল ও ট্যাক্স আদায় স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। ডিসিসিআইয়ের নেতারাও পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা যাতে তাঁদের কারখানা ও ব্যবসা নতুন করে শুরু করতে পারেন, সে জন্য স্বল্প সুদে ও সহজ কিস্তিতে ব্যাংকঋণ দেওয়ার সুপারিশও করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বাস্তবতার নিরিখে দেখলে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের প্রথম দাবি যৌক্তিক। কিন্তু বছরের বাকি সময়টা ট্যাক্স ও বিল আদায় স্থগিত রাখা কতটা যৌক্তিক, তা ভেবে দেখার বিষয়। বরং প্রয়োজনে তাঁরা ব্যাংকঋণ নিয়ে চলতি পাওনা শোধ করবেন এবং বকেয়া বিল ও ট্যাক্স আগামী বছর কিস্তিতে শোধ করার সুযোগ নিতে পারেন। চলতি পাওনা ও বকেয়া—পুরোটা অনাদায়ি থাকলে ব্যবসায়ীরাই বিপদে পড়বেন।

তারপরও বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। এ বিষয়ে এমন সমাধান আসতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে পারেন, আবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিলও শূন্য না হয়ে পড়ে।