মুন্সিগঞ্জে ত্রাণ কেলেঙ্কারি

বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ পুরোনো। কিন্তু মুন্সিগঞ্জে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ নিয়ে সোমবার যে ঘটনা ঘটল তা কেবল অনভিপ্রেত নয়, অমার্জনীয়ও। একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বালখিল্য আচরণ ও আত্মমহিমা প্রচারের কারণে এলাকার ৫০২ জন বন্যাদুর্গত অভাবী মানুষ ত্রাণ নিতে এসেও খালি হাতে ফিরে গেছেন। 

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সরকারি চাল বিতরণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হালদার ত্রাণপ্রত্যাশী মানুষের মধ্যে নিজের নাম ও ছবিসংবলিত স্লিপ দেন। এতে আপত্তি জানান উপজেলা চেয়ারম্যান জগলুল হায়দার। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর উপহারকে ইউপি চেয়ারম্যান নিজের বলে চালিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা আক্তারও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। ফলে নির্ধারিত দিন চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। 

ইউপি চেয়ারম্যান সরকারি ত্রাণসামগ্রী নিজের বলে চালিয়ে দেবেন কিংবা নিজের কৃতিত্ব জাহির করবেন, সেটি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর দেওয়া স্লিপে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার নাম না থাকায় তাঁরা চাল বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছেন। কথা হলো তালিকা অনুযায়ী দুর্গত মানুষকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হবে। সেখানে জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তার নাম ও ছবিসংবলিত স্লিপ থাকবে কেন? এটি অভাবী মানুষের সঙ্গে একধরনের ধাপ্পাবাজি। ইউপি চেয়ারম্যানের গোঁয়ার্তুমির কারণে যে পাঁচ শতাধিক অভাবী ও বন্যাদুর্গত মানুষ চাল না পেয়ে ফিরে গেলেন, হয়রানির শিকার হলেন, এর কৈফিয়ত কী। পরে তাঁদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই দিন হলো না কেন? 

ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, তিনি তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫০ জনকে চাল দিয়েছেন। তিনি নিজস্ব তহবিল থেকে যত খুশি ত্রাণসামগ্রী দেন, তাই বলে সরকারি বরাদ্দ নিজের নামে চালিয়ে দিতে পারেন না। দুর্গত মানুষকে যে সহায়তা দেওয়া হয়, সেটি কারও উপহার নয়, তাঁদের হক। 

ত্রাণসামগ্রী বিতরণের নামে অভাবী ও বন্যাদুর্গত মানুষের সঙ্গে এ ধরনের তামাশা বন্ধ হোক। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। ভবিষ্যতে সরকারি ত্রাণসামগ্রীকে যাতে কোনো জনপ্রতিনিধি নিজের নামে চালিয়ে দিতে না পারেন কিংবা আত্মমহিমা প্রচারের মাধ্যম না করতে পারেন, সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হোক।