সোনার বার আত্মসাৎ

সাম্প্রতিক কালে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সোনা চোরাচালানের ঘটনা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, তাকে এককথায় ভয়ংকর বলতে হবে। তাই এ রকম পরিস্থিতিতে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের কথিত সম্পৃক্ততার খবর জাতীয় নিরাপত্তার দুর্বলতা নির্দেশ করে কি না, সেই প্রশ্ন সামনে চলে আসে।

পুলিশের তিন সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডিবি মামলা দায়ের করলেও ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার এস এম শিবলী নোমানের নাম বাদ পড়েছে। এটা স্বাভাবিক নয়। তাঁর নাম যে প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য সন্দেহভাজন হিসেবে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটা প্রচলিত আইন সমর্থন করে না। তিনি দায়িত্বশীল পদে না থেকে সাধারণ নাগরিক হলে এ রকম সম্পৃক্ততার পরে এভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতেন না। সাধারণভাবে পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি জনগণের কাছে যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেছে। তাদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় অনেক আগে থেকেই উদ্বেগজনক ছিল। সম্প্রতি এ ধারণা যুক্ত হয়েছে যে পুলিশ বর্তমানে সরকারের হুকুমবরদার হিসেবে কাজ করছে। সুতরাং, সরকার তাদের সহজে ঘাঁটাতে যাবে না। এটা বাস্তবে কতটা সত্য, তা নিশ্চয় তর্কসাপেক্ষ, তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে তাদের নিরপেক্ষতা যে জোরালোভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারা ঘুষ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সদস্যদেরও ছেড়ে দিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। এই বিভাগ নিশ্চয় যুক্তি খাড়া করতে পারে যে অন্য দশটা সংস্থার অবক্ষয় থেকে পুলিশকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যাবে না। কিন্তু পুলিশ যেভাবে দ্রুত ভীতিকর ও অগ্রহণযোগ্য সংস্থায় পরিণত হচ্ছে, তার লাগাম টানা দরকার। সোনার বার আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তি দেওয়ার দায় প্রধানত পুলিশকেই পালন করতে হবে।

অন্যদিকে, সোনা চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তাগত দিক থেকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। কারণ, সোনা চোরাচালান কোনো মামুলি অপরাধ নয়। এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের মতো মারাত্মক অপরাধের কুশলীবেরা। সুতরাং, সোনা চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়ার পটভূমিতে দেশের মুখ্য নিরাপত্তাচৌকি ও স্থাপনাগুলোকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে যদি সরষেয় ভূত থাকে, তাহলে তা বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর মতো পরিস্থিতিকেই স্মরণ করিয়ে দেবে।

সরকারকে মনে রাখতে হবে, পুলিশই হলো নিরাপত্তার মৌলিক সোপান। এখন মানতে হবে, সেখানে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না। অধস্তনদের ওপর ঊর্ধ্বতনদের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থা শিথিল হয়ে পড়েছে। তবে তাদের মধ্যে অহমিকা এলে তা ভেঙে দিতে হবে। এ রকম একটি পরিস্থিতি চলতে দেওয়া কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।