চাই বিচার বিভাগীয় কমিশন

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধু ও সংগঠনকে দেওয়া সম্মাননা ক্রেস্ট নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছিল, তার দায়দায়িত্ব কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম এবং তাঁর অধীনের কর্মকর্তারা। অথচ সেই প্রতিমন্ত্রীই এখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে এ-সংক্রান্ত অভিযোগের বিচারক হওয়ার চেষ্টা করছেন।
সে ক্ষেত্রে গত বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্মাননা ক্রেস্টের সোনা চুরির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা দেশবাসীকে মোটেই আশ্বস্ত করবে না। কমিটি সদস্যদের ব্যাপারে আপত্তি না থাকলে যাঁর সভাপতিত্বে এই বৈঠক হয়েছে, তাঁকে নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন আছে।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, সম্মাননা ক্রেস্ট ক্রয় কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব বাবুল মিয়া বর্তমানে সংসদীয় কমিটির সভাপতির একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী এখন ‘ঠিকাদার অত্যধিক লোভ করতে গিয়ে সোনা জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়েছেন’ এবং ‘বিএসটিআই রিপোর্ট দিতে দেরি করেছে’ বলে সাফাই গাইছেন। কিন্তু সে সময়ে তিনি কী করেছেন?
যেহেতু সোনা জালিয়াতির ঘটনাটি এ বি তাজুল ইসলাম প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ঘটেছে, সেহেতু এ ব্যাপারে যেকোনো সিদ্ধান্ত হতে হবে তাঁকে বাদ দিয়েই। এ অপরাধের তদন্তকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংসদীয় কমিটির কোনো কাজে সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে যুক্ত করাও সমীচীন হবে না। সোনা জালিয়াতির ঘটনাটি অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধ এবং এর সঙ্গে দেশের মানসম্মান জড়িত। যত দিন ঘটনাটির তদন্ত শেষ না হয় তত দিন সংসদ নেতা অন্য কোনো সাংসদকে এই মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেবেন আশা করি। এবং তদন্তের স্বচ্ছতার জন্য সেটি জরুরিও।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকার ও সংসদ প্রথম থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথম আলোয় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকার নামকাওয়াস্তে একটি প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি করে, যা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করালে রহস্য উদ্ঘাটনের চেয়ে ধামাচাপা থাকার সম্ভাবনাই বেশি। দ্বিতীয়ত, যেহেতু সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঁচিয়ে আছে, সেহেতু তাঁর কাছে সংসদীয় তদন্ত কমিটি রিপোর্ট পেশ করাও ঠিক হবে না।
এ অবস্থায় সরকার যদি সত্যি সত্যি অপরাধীদের চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনতে চায়, তাহলে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের বিকল্প নেই। আর সেই কমিশনের প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের নামাঙ্কিত একটি মহৎ কাজকে বিতর্কিত করেছেন, যাঁরা বিদেশি সুহূদদের কাছে দেশের সম্মান বিকিয়ে দিয়েছেন, জনসমক্ষে তাঁদের চরিত্র উন্মোচন করার পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।