সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সক্রিয় হোন

নৌপরিবহনমন্ত্রী সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না বলে মন্তব্য করে বুঝিয়ে দিলেন যে সমুদ্র উপকূলে তেল ছড়িয়ে পড়লে সম্ভাব্য বিপর্যয় সম্পর্কে তাঁর অজ্ঞতা অপরিসীম! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তেলের জন্য সুন্দরবনের গাছপালা, মাছ ও পশুপাখির প্রাণ বিপন্ন হবে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বাস্তব হুমকি দেখা দেবে। গতকাল রোববারও একটি ইংরেজি দৈনিকে একটি মৃত ডলফিনের ছবি ছাপা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী কিছু দেখেও দেখেন না, শুনেও শোনেন না।
সুন্দরবনে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতি তো সাদাচোখেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তেল সরানোর কার্যকর ব্যবস্থা করা না হলে দীর্ঘ মেয়াদে শ্বাসমূলীয় বন ও বনের পশুপাখির জীবন বিপন্ন হতে পারে। মন্ত্রী কীভাবে বললেন যে কোনো ক্ষতি হয়নি, হবে না? কিসের ভিত্তিতে তিনি এ কথা বললেন?

সুন্দরবনে জাহাজ ডুবে সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ার পর অন্তত দুটি কাজ দ্রুত করা উচিত ছিল। প্রথমত, নদীতে ফ্লোটিং বুমের সাহায্যে ভাসমান তেল যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, নিয়ন্ত্রণে আনা ভাসমান তেল তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। এ জন্য বিশেষ প্রযুক্তির প্রয়োজন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বাহিনী দরকার। সাম্প্রতিক কালে দেশে ফার্নেস তেল আমদানি অন্তত ২০ গুণ বেড়েছে। এসব বিপজ্জনক পদার্থকে বলা হয় ‘হ্যাজম্যাট’ (হ্যাজারডাস ম্যাটেরিয়াল বা ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ) এবং এর পরিবহনে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া সাধারণ রীতি। মন্ত্রণালয় এই রীতি লঙ্ঘন করেছে। কোনো দুর্ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি তাদের ছিল না।
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যান্ত্রিক যান চলা দেশের ও আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমোদন কেন দেওয়া হলো, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এখন স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগ কাজে লাগিয়ে ও সমন্বিত ব্যবস্থায় তেল অপসারণের ব্যবস্থা করা জরুরি। মন্ত্রীর নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই।