সিএনজি অটোরিকশা

সিএনজি নামে পরিচিত অটোরিকশা একই সঙ্গে গতির দুর্গতি এবং দুর্গতির গতি। ইচ্ছামতো ভাড়া নেবে চালক, মালিক চালাবে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, বিআরটিএ হয়ে থাকবে ঠুঁটো জগন্নাথ! খাতটি কি সরকারের আওতার বাইরে? এ অবস্থায় যাত্রীদের পকেট তো কাটা পড়ছেই, ভোগান্তি ও বিবাদেরও একশেষ হচ্ছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার অটোরিকশার মেয়াদ শেষ। তারপরও সেগুলো চলছে ও ভাড়া নিচ্ছে। ২০০১ ও ২০০২ সালের নিবন্ধিত প্রতিটি অটোরিকশার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১০-১১ সালে। আরও চার বছরের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে স্থগিত। মেয়াদের অনুপাতে ভাড়ার হিসাব করা হলেও, সেই ভাড়া মালিকেরা মানেননি। বরং মেয়াদ ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ না করে তাদেরই আশকারা দিচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলো। মালিকদের লম্বা হাত যাত্রীদের পকেট কেটেই চলেছে! চালক দেয় মালিককে দেওয়া জমার দোহাই, মালিক দেখায় রক্ষণাবেক্ষণের খরচের অজুহাত। অথচ যাত্রীদের অভিযোগ শোনার কেউই নেই!
পাশাপাশি পুরোনো ট্যাক্সিক্যাব উঠিয়ে ব্যয়বহুল ট্যাক্সিক্যাব নামানোর সময় কথার ফুলঝুরি ছুটল বটে, কিন্তু যাত্রীদের খরচ না কমে বরং বাড়ল। ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরের অবস্থা আরও শোচনীয়।
দেশের বড় শহরগুলোয় আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা না থাকাই অটোরিকশা ব্যবসাকে বেলাগাম করেছে। যুগের পর যুগ এই খাতে নতুন উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশ সেই বিরল দেশগুলোর একটি, যেখানে শহুরে যাত্রীদের জন্য নেই ট্রেন-ট্রাম-ভূতল পরিবহন। ভাঙা বাসে ঠাসাঠাসির পরও জায়গা থাকে না। বাধ্য হয়ে চড়তে হয় অটোরিকশায়, কিন্তু সেখানেও বাড়তি ভাড়ার খেসারত! সরকার কি অটোরিকশা, ট্যাক্সি ও বাস মালিকদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি?
অটোরিকশাগুলোকে নিরাপদ করা এবং মালিক-চালকদের পকেট কাটা বন্ধ করা সম্ভব আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে। রাজধানী ও বন্দরনগরের গণপরিবহনব্যবস্থার প্রসার ও আধুনিকায়ন জরুরি। যে পৃথিবীতে গতিই উন্নতি, সেখানে বাংলাদেশের যাত্রীদের অগতির গতি কেন হবে অটোরিকশা?