অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার করুন

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংক হিসেবে বেসিক ব্যাংকের কার্যক্রম ছিল সন্তোষজনক। সেই ব্যাংক অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার তহবিল নয়ছয়ের খপ্পরে পড়ল। আর এখন যেটা সবচেয়ে দুঃখজনক, সেটা হলো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করা থেকেও সরকার উদাসীন থাকছে। এই অবস্থাটি তাদের আইনের শাসনের দাবিকে উপহাস করছে।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি মিডিয়ায় প্রকাশের চার বছর এবং নাটের গুরুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছুটা বিলম্বিত সুপারিশেরও দীর্ঘ সময় পরে বিষয়টির কিনারা হলো না। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির কাছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান সাফাই যুক্তি দিয়েছেন যে তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করছেন এবং মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হবে। দুদকের চেয়ারম্যানের এই যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, তঁারা যথেষ্ট সময় নেওয়ার পরও এ রকম একটি দালিলিকভাবে প্রমাণিত আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত সম্পন্ন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। অথচ সে জন্য তঁাদের কোনো জবাবদিহি নেই। টাকার অঙ্কটা যে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা এবং একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক লুটপাট হওয়ার মতো সংবেদনশীল বিষয়—এটা দুদকের বিবৃতিতে কখনো প্রকাশ পায়নি।
পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার সময়েও প্রতীয়মান হয়েছে যে তারা ক্ষমতাসীন দলের স্পর্শকাতরতাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে উদ্গ্রীব। বেসিক ব্যাংকের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নিতে সরকারের মতো দুদকও গড়িমসি করছে। ২০১১ সালে গণমাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর সরকার বোর্ড ভাঙতে তিন বছর সময় নেয়। ব্যাংকটির সন্দেহভাজন এমডিকে অপসারণের পরে তাঁর দেশত্যাগের খবর বেরিয়েছিল।
দুদককে মানতে হবে, এটা এমন একধরনের দায়মুক্তি, যা আর্থিক খাতের শৃঙ্খলার জন্য বিরাট হুমকি। এর দ্রুত বিহিত হোক।