যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুততর করা হোক

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে কার্যকর করার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো যে চিহ্নিত গণহত্যাকারীদের বিচার এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এর আগে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ আরও আটজনকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় দিয়েছেন। ওগুলো এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
এই নেতারা ১৯৭১ সালে রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠন করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মিলে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালায়। দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করে একের পর এক রায় দিয়েছেন। যথাসম্ভব সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এই বিচারকাজ চলেছে। ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ রোধে এই বিচার দরকার।
কামারুজ্জামানের অপরাধ ছিল ভয়াবহ। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজসহ সাতটি অভিযোগ ছিল। এর চারটিতেই সাজা হয়। সবচেয়ে ভয়ানক অভিযোগ ছিল একাত্তরের ২৫ জুলাই শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে তাঁর নেতৃত্বে আলবদর-রাজাকার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাদের পরিচালিত ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ। ওই নিষ্ঠুর ঘটনায় ১২০ জন প্রাণ হারান। গ্রামটি তখন থেকে ‘বিধবাপল্লি’ নামে পরিচিত। আজ ৪৪ বছর পর সব হারানো সেই বিধবারা ন্যায়বিচার লাভ করে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পেয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামী দলটি কথায় কথায় হরতাল ডেকে আরেক অপরাধ করে চলেছে। কামারুজ্জামানের ফাঁসির প্রতিবাদে আজ আবার হরতাল ডাকা রাজনৈতিক অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা এর আগেও দুই দিন হরতাল ডেকেছে। কেউ মানে না। এমনকি বিএনপিও তাদের পাশে নেই। তাও তাদের বোধোদয় হয় না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার–প্রক্রিয়া, নিয়মের মধ্যে থেকেই, দ্রুততর করতে হবে। নাহলে একে নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-বিবাদ প্রলম্বিত হতে থাকবে। তাই বিচার ও রায় কার্যকর করে এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি খুব জরুরি।