জাতীয় যুব-সততা জরিপ

টিআইবির ‘জাতীয় যুব-সততা জরিপ ২০১৫’ শীর্ষক জরিপে যুবাদের কাছে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিপ্রবণদের পরিচয় উঠে এসেছে: রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। টিআইবির অতীতের জরিপ, জনসাধারণের বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক পর্যবেক্ষণ এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া প্রতিবেদনের সঙ্গে যুব-সততা জরিপের সাযুজ্য রয়েছে। কিন্তু এটা যতই সত্য হোক, তা মেনে নেওয়া কঠিন।
জনগণের জীবনের উন্নতি, নিরাপত্তা ও আইনের শাসনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরাই যদি দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকে, তাহলে আশার প্রদীপ নির্বাপিত হওয়ার আশঙ্কায় পড়ে। সম্প্রতি পুলিশের ভেতরে চলতে থাকা ঘুষ–বাণিজ্য, উৎকোচ তহবিল গঠন ও মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকার যেসব আলামত গণমাধ্যমে এসেছে, তাতে টিআইবির জরিপের সত্যতাই প্রমাণ করে।
এই জরিপে অংশ নেওয়া ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবাদের ৮৬ শতাংশ রাজনীতিতে ও ৬৬ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে সততার অভাব দেখতে পান। তাঁরা বেসরকারি খাতের চেয়ে সরকারি সেবা খাতে দুর্নীতি বেশি বলেও মনে করেন। আরও মারাত্মক কথা, এই যুবাদের বড় অংশই অনুচিত জেনেও দুর্নীতি করতে বাধ্য হবে বলে মত দিয়েছে। কেননা, তারা জানে (৬২ শতাংশ) দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লাভ হয় না।
তবে তরুণেরা মনে করেন, অসৎ ব্যক্তির চেয়ে সৎ ব্যক্তির জীবনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং তাঁদের ৭০ শতাংশই চাকরি ও পরীক্ষায় প্রতারণার পথ পরিহার করার কথা বলেছেন। এই তরুণেরা হয়তো হতাশ, কিন্তু তাঁরা অসততার কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। সমাজের কল্যাণের সব শক্তির উচিত, তরুণদের এই দুর্নীতি সচেতনতা ও সততার প্রতি আগ্রহকে টিকিয়ে রাখায় কাজ করা। তাহলেই রাজনীতির আশ্রয়ে চলা সর্বস্তরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববাঁধ রচনা সম্ভব হবে। জরিপে যেভাবে যুবকেরা অন্যায়ের বিপক্ষে এবং সততার পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, ব্যক্তি ও সমষ্টিগত জীবনেও তারা সেই ভূমিকা রাখতে দ্বিধা করবে না। অসততার বিরুদ্ধে জাগ্রত থাকুক যুবসমাজ।