ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রের নারী উদ্যোক্তা

দেশের সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র (ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বা ইউডিসি) যে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের বেশ উপকারে আসছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু চালু হওয়ার পর থেকে গত পাঁচ বছরে এগুলোর নারী উদ্যোক্তাদের অর্ধেকই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা হতাশাব্যঞ্জক।
নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শুরু থেকে প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে একজন পুরুষ উদ্যোক্তার সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও যুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচির পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ইউডিসি শুমারি ও প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের অনুসন্ধান—এ তিন মাধ্যমেই নারী উদ্যোক্তাদের নিষ্ক্রিয়তা ও নিরুৎসাহের চিত্র মিলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে নারীদের যুক্ত করার সিদ্ধান্তটিকে ফলপ্রসূ করার প্রস্তুতি কতটা ছিল। পাঁচ বছরের ব্যবধানে কার্যত দেখা যাচ্ছে প্রস্তুতির অভাব ছিল প্রকট।
নারী উদ্যোক্তার অর্ধেক ঝরে গেছেননারী উদ্যোক্তাদের নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার প্রধান যে কারণটি চিহ্নিত করা হয়েছে, তা হলো এই কাজে তাঁদের প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব। যেসব নারী উদ্যোক্তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই তথ্যকেন্দ্রগুলোয় সেবাদানের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। সে কারণে পুরুষ উদ্যোক্তাদের তুলনায় তাঁদের আয় অত্যন্ত কম: একজন পুরুষ উদ্যোক্তা যেখানে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন, সেখানে একজন নারী উদ্যোক্তা পারেন ৬ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অনেক নারী উদ্যোক্তা কম্পিউটার চালু করা ও বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি; ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না জানলে তথ্যকেন্দ্রে সেবা দেওয়া অসম্ভব। নারী উদ্যোক্তাদের যে সামান্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা যে ফলপ্রসূ হয়নি, তা বাস্তব কাজের ক্ষেত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রগুলোর সেবা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নারী উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সে জন্য তাঁদের মানসম্পন্ন ও টেকসই প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়াই প্রথম জরুরি কাজ।