প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ

কাবিখা ও কাবিটা তথা কাজের বিনিময়ে খাদ্য অথবা টাকা কর্মসূচি এখন তছরুপ কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় সব সরকারের আমলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তৃণমূল পর্যায়ে নেওয়া উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে থাকে। সোমবারের প্রথম আলোয় দোহার-নবাবগঞ্জে কাজ না করে রাস্তার টাকা আত্মসাতের খবরে উঠে এসেছে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ পিনু খানের নাম। কাগজে-কলমে রাস্তা নির্মিত হয়েছে দেখানো হলেও বাস্তবে সেখানে বিরাজ করছে ধানখেত। এটি বিরল ঘটনা নয়, বরং উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ আত্মসাতের ডুবোপাহাড়ের ভাসমান চূড়া এটি।
কাজ না করে রাস্তার টাকা আত্মসাৎ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কাবিখা ও কাবিটা কর্মসূচির অর্থে চারটি সড়কের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ না হলেও সব টাকা তুলে নিয়ে গেছেন সাংসদ পিনু খান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকেরা। বরাদ্দের ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন গম নির্ধারিত কাজে ব্যয় না করে তিনি কী করেছেন, তা জানা দরকার। পিনু খান একাধারে আওয়ামী লীগের সাংসদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। সুতরাং তিনি কোনো অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে এর দায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল—উভয়ের ওপরই বর্তায়। পিনু খানের পুত্র নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দুই শ্রমজীবীকে হত্যার দায়ে বিচারের মুখোমুখি। সপরিবারে এত দুর্নীতি ও অনাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, কী করে তিনি সাংসদ ও দলের পদে বহাল থাকছেন? পিনু খানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।
কাবিখা ও কাবিটার প্রচলন হয়েছিল তৃণমূলে একই সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে। কিন্তু দেখা যায় এটাই হয়ে উঠেছে সাংসদ থেকে শুরু করে উপজেলা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং তৃণমূল প্রশাসনের দুর্নীতির অন্যতম ক্ষেত্র। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে যে প্রান্তিক মানুষের জন্য উন্নয়ন কর্মসূচি, তা থেকে তাঁরা যেমন বঞ্চিত হবেন, তেমনি ব্যাহত হবে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নও।