৬৮ বছরের দুঃখের অবসান

সীমান্তের এপারে এবং ওপারের ছিটমহলগুলোতে গতকালের সূর্যোদয় আর আজকের সূর্যোদয়টি এক নয়। আজকের সূর্যোদয় তাদের জন্য নিয়ে এসেছে স্বাধীনতার সুসংবাদ। গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ভারতীয় এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দারা পরাধীনতার অভিশাপমুক্ত হলো। আমরা ছিটের সব বাসিন্দাকে জানাই উষ্ণ অভিনন্দন। ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারকে, দেরিতে হলেও যাদের চেষ্টায় ছিটমহলবাসীর স্বপ্ন পূরণ হলো।
দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে তারা ছিল পরিচয়হীন, ছিল সব ধরনের মানবিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের নির্মমতার শিকার ছিটের এই বাসিন্দারা কত দিনে স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবে, তা নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছা ও কাজের ওপর। ভারত সরকার সেখানকার ছিটের বাসিন্দাদের জন্য বিশাল অঙ্কের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও বাংলাদেশে সে রকম উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। লোকসংখ্যা যত কমই হোক, ১৭ হাজার একর ভূখণ্ডের উন্নয়নের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল।
ছিটের মানুষেরা যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করল, তা অর্থবহ করতে হলে মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের মতো তাদেরও সব ধরনের রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এসব ছিটমহলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগব্যবস্থা বলতে কিছু নেই।
জরুরি ভিত্তিতে সেখানে বিদ্যালয় ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, যাতে স্বার্থান্বেষী মহল ছিটের গরিব মানুষের জমিজমা কেড়ে না নিতে পারে। একই সঙ্গে সেই বাহিনীর কার্যক্রম তদারকের জন্য নাগরিক সংগঠনের সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।
দুই দেশের সঙ্গেই এসব ছিটের মানুষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল এবং এখনো আছে। অনেকে এপারে থাকলেও আত্মীয়স্বজন আছে ওপারে। ফলে উভয় দেশের মানুষ যাতে অনায়াসে চলাচল করতে পারে, তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া রেখে কি সেটি সম্ভব?