শিক্ষকেরা আর কত দিন রাস্তায় থাকবেন?

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে উদ্ভূত সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তারপরই ঈদুল আজহার ছুটি ঘোষিত হলো। অবশ্য ছুটির আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিদেশ থেকে ফিরেই শিক্ষকদের নেতাদের সঙ্গে বসেছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শিক্ষক নেতারা আন্দোলন ও আলোচনা একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। 
সমস্যা হলো প্রধানমন্ত্রী যে দুই মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁদের একজন অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্কে আছেন। তিনি ফিরবেন আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে। সে ক্ষেত্রে তাঁর না ফেরা পর্যন্ত কি সমস্যাটি এভাবে ঝুলে থাকবে? আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তিনি বিদেশে বসেও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এর আগে বেতন কাঠামোর আপত্তি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা কমিটিও গঠন করা হয়। যদিও অর্থমন্ত্রীর একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেতারা তাঁর সঙ্গে বসবেন না বলে জানিয়েছিলেন। পরে অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
এখন শিক্ষক নেতারা যদি তাঁদের পূর্বতন অবস্থান থেকে সরেও আসেন অক্টোবরের আগে তাঁর সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে না। শিক্ষকদের প্রতি শতভাগ সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষামন্ত্রী যে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না, সেটি প্রথম দিনের বৈঠকেই ধারণা করা গিয়েছে। শিক্ষকদের দাবি মানার সঙ্গে যেহেতু আর্থিক বিষয়টি জড়িত, সেহেতু অর্থমন্ত্রীর সম্মতি জরুরি।
তাহলে কি তিনি দেশে না আসা পর্যন্ত শিক্ষকেরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন? আর সেই আন্দোলনের ধরনই বা কী হবে? ক্লাস-পরীক্ষা কত দিন বন্ধ থাকবে?
চলতি বছর বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধের কারণে শিক্ষাঙ্গন প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-উপাচার্য কিংবা শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিরোধের কারণেও পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো অচলাবস্থা চলছে। এখন যদি শিক্ষক আন্দোলনের কারণে অনির্দিষ্টকাল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে, তাহলে সেশনজট অবধারিত।
আশা করি, সম্মানিত শিক্ষকেরা বিষয়টি সদয় দৃষ্টিতে দেখবেন। তবে তাঁরা তখনই সদয় হতে পারবেন, যখন সরকার শিক্ষকদের প্রতি সহৃদয়তা দেখাবেন। তাঁদের ন্যায্য দাবি মেনে নেবেন।
কেবল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নন, আন্দোলনে আছেন কলেজ শিক্ষকেরা, আন্দোলনে আছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এমনকি সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকেরাও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষকদের দাবিদাওয়াগুলো ন্যায়সংগত। তাঁরা নতুন কোনো আবদার করেননি। আগের বেতন কাঠামোয় যে সুযোগ ও মর্যাদা ছিল, সেগুলো অক্ষুণ্ন রাখার কথা বলেছেন। বছরের প্রথম তিন মাস বিরোধী দলের আন্দোলনের কারণে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো ক্লাস পরীক্ষা হতে পারেনি। এখন বছরের শেষ তিন মাসে যদি সরকারের অনমনীয়তার কারণে ফের শিক্ষাঙ্গন উত্তপ্ত হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকেরা নতুন কোনো দাবিদাওয়ার কথা বলেননি। তাঁদের যৌক্তিক দাবি, এত দিন যে সুযোগ-সুবিধা আগে পেয়ে আসছেন, সেটি কেন কমানো হবে? সরকার শিক্ষকদের দেওয়া কোনো সুবিধা বাড়াতে না পারে, কমাতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে বসাতে চান বলেই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন কারা সেটি বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছেন না?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট বিরোধী সফল আন্দোলনের কথাটি সরকার মনে রাখবে আশা করি। আমলাতন্ত্র অনেক সময়ই সরকারকে ভুল বোঝায়। আমলা ছাড়া আর কেউ গুরুত্বপূর্ণ নন, এই মানসিকতা থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। নতুন মাস শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষকদের ন্যায়সংগত দাবি দাওয়া মেনে নেওয়া হোক। শিক্ষকদের বঞ্চিত করে কোনো দেশ কিংবা দেশের শিক্ষা এগোতে পারে না। নীতিনির্ধারকেরা এই সত্যটি যত দ্রুত অনুধাবন করবেন, ততই মঙ্গল।