লেখক-শিল্পীদের নিরাপত্তা

একটার পর একটা খুনের ঘটনা ও লেখক-প্রকাশক-শিল্পী তথা মুক্তবুদ্ধির মানুষের প্রতি ক্রমাগত হুমকির ঘটনায় জনমনে যে গভীর উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে, তা দূর হবে কীভাবে—সেই প্রশ্নটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ যাঁদেরই হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হুমকিদাতাদের খুঁজে বের করে বিচারে সোপর্দ করাই সবচেয়ে জরুরি কাজ। জনমনে নিরাপত্তাহীনতার যে বোধ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হুমকিদাতাদের শনাক্ত করাই এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে দঁাড়িয়েছে।
জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিনকে (দীপন) হত্যার দুই সপ্তাহ পার হলেও এ পর্যন্ত এর সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে দেশের ৩৮ জন লেখক-বুদ্ধিজীবী যৌথ বিবৃতি দিয়ে লেখক-প্রকাশক হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন, তার প্রতি আমরা সংহতি জানাই। এটা মানতে হবে যে অপরাধীদের শাস্তির মুখোমুখি করা যাচ্ছে না বলেই তারা এ ধরেনর ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে।
লেখক–শিল্পীদের হুমকি, নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগআরও উদ্বেগজনক হলো, লেখক হত্যা ও সন্ত্রাসী ঘটনার মতো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অনেকেই অনায়াসে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাচ্ছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে সরকারের ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবে কাজ করছে বলে মনে হয় না। লেখক-ব্লগার হত্যা মামলার তদন্তে ধীরগতি এবং চার্জশিট না দেওয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।
সন্ত্রাসী চক্র যে কেবল ব্যক্তি মানুষকে হত্যা করছে তা–ই নয়, এর মাধ্যমে তারা দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও বাক্স্বাধীনতার ওপর হামলা করছে। কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে এটি চলতে পারে না। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দলমত-নির্বিশেষে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব মানুষের ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে হবে।
তবে সবার আগে অপরাধী চক্রকে ধরে বিচারে সোপর্দ করতে হবে এবং সেটাই জনমনে নিরাপত্তাবোধ ও অভয় পরিবেশ ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায়।