চার দিনের হরতাল

হরতাল সরকারের ওপর আদৌ কোনো চাপ তৈরি করে কি না, সেটা পরিষ্কার না হলেও দেশ ও জনগণের যে বারোটা বাজে, সেটা স্পষ্ট। বিরোধী দল ও জোট একের পর এক হরতাল ডেকে যাচ্ছে, তাতে যেহেতু সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না, তখন অব্যাহতভাবে এই অকার্যকর হরতাল ডাকার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, জেনেশুনে দেশ ও জনগণের সর্বনাশের পথ বেছে নেওয়া। দুই দফায় ৬০ ঘণ্টা করে হরতালের পর আজ থেকে আবার টানা চার দিনের হরতাল ডেকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সেই পথই ধরল। আর নির্বাচন প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো ধরনের কার্যকর সমঝোতার উদ্যোগ না নিয়ে সরকার ও সরকারি দল কার্যত বিরোধী দলের এই হরতালের প্রতি সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল যে আচরণ করছে, সেখানে আর যা-ই হোক, দেশ ও জনগণ কোনো বিবেচনার মধ্যে নেই। দাবি আদায়ে বিরোধী দল তাদের আন্দোলন হিসেবে একের পর এক হরতাল ডাকার কৌশল নিয়েছে। আমরা বারবার বলে আসছি যে হরতাল এখন আর রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে কার্যকর নয়। এটা এখন নিছক সন্ত্রাস, সহিংসতা ও নৃশংসতার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। দাবি আদায়ে কার্যকর বা কষ্টসাধ্য কোনো কর্মসূচিতে সম্ভবত বিরোধী দল আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে গণমাধ্যমের লোকজনকে ডেকে দিন ও সময় ধরে হরতাল ডেকে দেওয়া, আর একই সঙ্গে দলের কিছু সন্ত্রাসী বা ভাড়াটে দুর্বৃত্তকে দিয়ে যানবাহনে আগুন দেওয়া ও বোমা-ককটেল মারা। আগাম ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে জনগণকে হরতাল মানতে বাধ্য করা।
গত হরতালগুলোতে আমরা এই রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতা ও নৃশংসতা দেখেছি। যার শিকার হয়েছে সাধারণ জনগণ। জনগণের বিরুদ্ধে এই নৃশংসতার দায় হরতাল আহ্বানকারী বিরোধী দল ও জোটকেই নিতে হবে। হরতালের মতো অকার্যকর অথচ আগুনে পুড়িয়ে মারা বা বোমা-ককটেল হামলা চালানোর মতো নৃশংস কর্মসূচি না দিতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু বিরোধী দল সম্ভবত এই পথকেই তাদের মোক্ষ বলে মনে করছে। কিন্তু এই হরতালের মধ্য দিয়ে বিরোধী দল আসলে কী অর্জন করতে চায়? আরও কিছু মৃত্যু, আরও নৃশংসতা?