টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ তিন বছর পরে টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ আমানুর রহমান খানসহ তাঁর চার ভাইকে অভিযুক্ত করার ঘটনা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বাস্তবতাই নির্দেশ করে। নিহত ফারুক পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে ‘প্রতিরোধযুদ্ধে’ অংশ নিয়ে পঙ্গু হয়েছিলেন। একাত্তরে মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত রণাঙ্গন পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন। অভিযোগপত্র দাখিলে দীর্ঘ কালক্ষেপণের ঘটনা নিশ্চয় দুঃখজনক। তবে পুলিশ ও ডিবি পুলিশকে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই যে তারা এই মামলায় স্বাধীনভাবে তদন্ত চালিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ও তাঁর স্বজনদের অভিযুক্ত করেছে।
অভিযোগপত্রে সাংসদেরা চার ভাইনিহত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এই মামলার এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেননি। সেদিক থেকে এটা একটা ব্যতিক্রমী অভিযোগপত্র। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলেই যে সব সময় আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান করা যায় না, তাও প্রতিষ্ঠিত হলো। এর আগে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে টাঙ্গাইল অঞ্চলের ভুক্তভোগীরা বেদনা অনুভব করেছেন, যখন তাঁরা দেখেছেন প্রভাবশালী খান পরিবারের সদস্যরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। অভিযুক্ত চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অর্ধশত মামলা হলেও তার কোনো সফল বিচার–প্রক্রিয়া মানুষ দেখেনি। কখনো বাদী ও সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। আবার ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ সরকার নিজেই কখনো তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে, যার মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার সংকট ও তা নিরসনে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়ার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদের প্রার্থী হওয়া থেকে সরে দাঁড়াতে সাংসদ ভাইদের হুমকি নিহত ফারুক অগ্রাহ্য করেছিলেন। রাকিব ও রাজন হত্যাকাণ্ডের মতো দ্রুত বিচারের আরেকটি নজির স্থাপনের গুরুত্ব সরকারকে অনুধাবন করতে হবে। আর অভিযোগপত্রভুক্ত একজন খুনের আসামির বিরুদ্ধে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদ ও দলের ফোরামে তাঁকে আপাতত নিষ্ক্রিয় করার একটা নৈতিক দায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ সম্ভবত এড়াতে পারে না।