বেসিক ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান। বেসিক ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সর্বশেষ বক্তব্যে বিস্ময়টা প্রকট হওয়াই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই ব্যাংকটির মাধ্যমে ঋণের নামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে, কিন্তু দুদক চার বছর ধরে ‘অনুসন্ধান’ চালিয়েও সেই কেলেঙ্কারির সঙ্গে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি। অর্থমন্ত্রী গত মঙ্গলবার সুস্পষ্ট ভাষায় লিখিতভাবে জাতীয় সংসদকে জানালেন, ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা ছিল। আমাদের প্রশ্ন, দুদক তাঁর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি কেন?
বেসিক ব্যাংকে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রদানের প্রক্রিয়ায় তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা ছিল—অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিত্তি হলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ করা দুটি বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের উপস্থাপিত কার্যভিত্তিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দুদক মামলা করেছে ৫৬টি, আসামি করেছে ১৫৬ জনকে। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ব্যাংকটির কর্মকর্তা; কিন্তু স্বয়ং চেয়ারম্যান বা পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের কোনো অভিযোগ নেই। বিস্ময়টা এখানেই: কর্মকর্তারাই যদি হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন, তাহলে পরিচালনা পর্ষদ আছে কী করতে? চেয়ারম্যানের কাজ কী? কী কাজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের?
অর্থমন্ত্রী এর আগেও বলেছেন, বেসিক ব্যাংকে হরিলুট হয়েছে। যাঁরা হরিলুটের ব্যবস্থা করেছেন, তাঁদের ধরার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ‘নিজের দলের লোক’দের কথা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের হরিলুটের বিচার করার ক্ষেত্রে দলের লোক যদি বাধা হয়, তাহলে তো গোড়ায় হাত দিতে হবে। দলীয় আনুগত্যের পুরস্কার বিলানোর সংস্কৃতি থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্তি দিতে হবে।
ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী হোন না কেন, আইনকানুনের ঊর্ধ্বে কাউকেই থাকতে দেওয়া চলে না। খোদ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের নিয়োগ করা বহির্নিরীক্ষকদের নিরীক্ষায় যখন আবদুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা ধরা পড়েছে, তখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত সরকারের।