সাংবাদিকতার আমৃত্যু শিক্ষক

এবিএম মূসা
এবিএম মূসা

জীবনের শেষ দিনগুলোতে অবশ্যই মূসা ভাই তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে একজন অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে চেয়েছিলেন। সেটাকে কেউ স্বনিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশিং বলতে পারেন। আমরা আশা করব মূসা ভাইয়ের সেই শূন্যস্থান কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ দ্রুত পূরণ করে দিতে সচেষ্ট হবেন। মূসা ভাই নিশ্চয় রাজনীতিক হতে চাননি। তিনি সাংবাদিকতাকেই ভালোবেসেছেন। সেটাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। কারও লেখা ভালো লাগলে তিনি যেমন অকুণ্ঠ প্রশংসা করতেন, তেমনি কোনো প্রতিবেদনে তথ্যগত ভুল থাকলে ধরিয়ে দিতেন। এমনকি কোন খবরটি কোন পাতায় হওয়া উচিত সে সম্পর্কেও স্পষ্ট মতামত দিতেন মূসা ভাই। বলা যায়, তিনি ছিলেন সাংবাদিকতার আমৃত্যু শিক্ষক। কঠিন সেন্সরশিপের মধ্যে কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করে সত্য প্রকাশ করা যেত, তার অনুকরণীয় নজির হয়ে আছেন মূসা ভাই। 

তিনি তাঁর পেশাগত জীবনের গোড়া থেকেই মেধা ও দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। সব সময় উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলিতে কুশলী সাংবাদিকতার ছাপ রাখতেই সচেষ্ট থেকেছেন। ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবেও তাঁর মনে একটা গর্ব ছিল। যেমন আমাকে বলতেন, তোর সঙ্গে আমার একটা মিল আছে। কী মিল? আমি কখনো ক্রীড়া সাংবাদিকতার খাতায় নাম লেখাইনি। আর আপনি তো ক্রীড়া সাংবাদিকই হতে চেয়েছিলেন। মূসা ভাই হেসে বলেছেন, তুই আদালতের খবর যেভাবে লিখিস, সেভাবে ক্রীড়া সাংবাদিককেও প্রখর নজর রাখতে হয়। অন্য অনেক বিষয়ের সাংবাদিকেরা প্রায় ১০টি বা আনুমানিক বা মোটামুটি বলে খবর পরিবেশন করতে পারেন। কিন্তু এই দুটি ক্ষেত্রে একদম তা চলবে না। কয়টি গোল বা রান হয়েছে আর জজ সাহেব ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন কি দেননি, সেখানে কোনো প্রায় বা অনুমানের বালাই নেই।

সংবিধান ও বিচার বিভাগ নিয়েও মূসা ভাইয়ের আগ্রহ ছিল। কোনো কলাম লিখতে বসে তাঁর ফোন পেতাম। তাঁকে দ্রুত কোন আইনের কোন ধারায় কী আছে, সেটা সরবরাহ করতে হতো। আমি এসব তাঁকে সরবরাহ করতে পেরে আনন্দিত হতাম। তিনি এমনভাবে ঐতিহাসিক ঘটনা ও পরম্পরা বর্ণনা করতেন যে আমরা অবাক হতাম। আমি কয়েকটি দিন টেপ রেকর্ডার হাতে ঘুরছিলাম এই আশায় যে, তিনি এমন একটা সাক্ষাৎকার দেবেন, যা আগে তিনি কখনো প্রকাশ করেননি। অথচ নীরব সাক্ষী ছিলেন। কিছু কথা বলতে চেয়েছিলেন কি? জানি না। কেউ দেখে ফেললে কী ভাববে, সেই ঝুঁকি নিয়েও মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা আগেও টেপ নিয়ে গিয়েছিলাম। মূসা ভাই দূর অতীত বলেননি। নিকট অতীতের কয়েক ছত্র বলেছিলেন। আর সেটা সংলাপ নিয়ে। একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ তাঁকে আসতে বলেছিলেন, তাঁরা যেকোনো বিবেচনাতেই হোক ৫ জানুয়ারির আগে বিএনপির সঙ্গে একটা মধ্যস্থতা চেয়েছিলেন। সেটা একটা সুতো কিংবা সলতে।  

আমরা মূসা ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, কারণ আমরা মনে করি মূসা ভাই আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিলেমিশে আছেন, আর আছে সেই সলতেটা, যেটা জ্বালাতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে আপস না করেই মূসা ভাই যে ঐক্যের সলতে জ্বালাতে চেয়েছিলেন, তার প্রজ্বলন কামনা করি। 

মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷