রাষ্ট্রের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখাটাই জরুরি

দেশে আইএস না থাকার সরকারি দাবি ও এ–সংক্রান্ত বিতর্কের প্রেক্ষাপটেই আইএসের অনলাইন সাময়িকী ‘দাবিক’ বাংলাদেশকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের যে নাশকতামূলক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, তা উদ্বেগজনক। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পুরো বিষয়টি এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও সামর্থ্য অর্জনের বিষয়টিকে নতুন করে সামনে এনেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংগঠনিকভাবে আইএস না থাকার কথাটি পুনর্ব্যক্ত করেই ক্ষান্ত থাকেননি। একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। যদি সেটাই বাস্তবতা হয়, তাহলে সরকারের উচিত হবে দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বাসযোগ্যভাবে এটা বুঝিয়ে দেওয়া যে এ ধরনের কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবে না। সরকারের জঙ্গিবিরোধী তৎপরতা যে কার্যকর এবং অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, সেটা শুধু সরকারিভাবে পুনঃ পুনঃ আশ্বস্ত বা অঙ্গীকার ব্যক্ত করার মধ্যেই সীমিত রাখার মতো কোনো বিষয় হতে পারে না।
এটা গভীর উদ্বেগজনক যে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালীয় নাগরিক সিজার তাবেলা ও ৩ অক্টোবর জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ড থেকে এসব ঘটনায় ‘আইএস’–এর সম্পৃক্তির বিষয়টি আলোচনায় আসে। সেই থেকে থেমে থেমে কিন্তু ধারাবাহিকভাবে মোটামুটি ‘একই কায়দায়’ হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসব খুনের তদন্তের সন্তোষজনক ফলাফল নিশ্চিত করা থেকে অনেক দূরে রয়েছে। সে বিবেচনায় ‘কৌশলগত অবস্থানের’ কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারত ও মিয়ানমারে হামলা চালানোর ব্যাপারে ‘আইএস’-এর দাবির বিষয়টি বাড়তি বিচার–বিবেচনার দাবি রাখে।
আর সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তরফে যখন নতুন সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ‘সমন্বয়ক’সহ ‘আইএস জঙ্গি’র চারটি মামলার তদন্ত আবার শুরুর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে, তখন তা বাংলাদেশে ব্যক্তি পর্যায়ে বা বিচ্ছিন্নভাবে হলেও আইএস মতাদর্শে বিশ্বাসীদের অস্তিত্বের একটা ইঙ্গিত দেয়। অনলাইনের যুগে ‘সাংগঠনিকভাবে’ কথাটি নানাভাবে অর্থপূর্ণ হতে পারে। সুতরাং জঙ্গিত্বসহ যেকোনো নাশকতা বা ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে রাষ্ট্রের সামর্থ্য ও তার কার্যকরতার প্রমাণ রাখাটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।