কলাবাগানে জোড়া খুন

রাজশাহীতে অধ্যাপক খুনের ঘটনার দুদিনের মাথায় ঢাকার কলাবাগানে বাসায় ঢুকে দুজনকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেদিন সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপর রয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেদিনই এই দুই খুনের ঘটনা যেন বাস্তব পরিস্থিতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
একের পর এক ও একই কায়দায় ঘটে যাওয়া এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর কোনো রহস্যভেদ, খুনি চক্র শনাক্ত ও বিচার না হওয়ার কারণেই যে এসব ঘটনা ঘটে চলেছে, সেটা পরিষ্কার। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বললেন, যতগুলো খুন হয়েছে, সব কটি তদন্ত করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি কিসের ভিত্তিতে এটা বললেন? এর কোনো প্রমাণ তো আমরা দেখছি না।
কলাবাগানে যে কায়দায় বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে হত্যা করা হলো, তা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ ও তাদের গোয়েন্দা তৎপরতার চরম ব্যর্থতার পরিচয়। পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক মনে করেন, হত্যাকাণ্ডটি সুপরিকল্পিত এবং খুনিরা অনেক দিন ধরে রেকি করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এটা সত্যিই বিস্ময়কর ও অবিশ্বাস্য যে খুনি চক্র দীর্ঘ সময় ধরে পরিকল্পনা করছে ও একের পর এক খুন করে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে আর আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারছে না!
এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর আইএস বা আল–কায়েদা ও তাদের বাংলাদেশি সহযোগীদের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হয়, আর সরকারের তরফে এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিএনপি-জামায়াত চক্র ‘গুপ্ত হত্যাকাণ্ড’ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যারাই এর সঙ্গে জড়িত থাক, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা সরকারের দায়িত্ব। নয়তো এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। উপরন্তু তা পুলিশি তদন্তে প্রভাব ফেলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আমরা চাই, সরকার এ ধরনের সব খুনের ঘটনার রহস্যভেদ ও জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিক।