আপনি কোথায়?

আজকাল মনের মধ্যে যেমন প্রশ্ন জাগে, ঠিক তেমনি অবাকও লাগে! এ দেশ কার? আমরা কারা? কারা এ দেশের বৈধ নাগরিক? যাদের বিনা কারণে পথে-ঘাটে, যানবাহনে জীবন্ত পুড়িয়ে আগুনে ঝলসে মারা হচ্ছে, তারাই বা কারা? এ দেশ কি তাদেরও, নাকি শুধু কতিপয় রাজনীতিবিদ ও তাঁদের নেতা-কর্মীদের!
যে মানুষটি অকারণে আগুনে পুড়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে, সেও কি এ দেশেই জন্মেছিল? নাকি ভিনদেশ থেকে উড়ে এসে অনিশ্চিত জীবনের বোঝা নিয়ে এ দেশের ময়লা-আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। নতুবা কেন ময়লা-আবর্জনার মতোই অবলীলায় পুড়িয়ে মারা হচ্ছে নিরীহ মানুষগুলোকে!
আর কত দিন পর, আর কত প্রাণের খরচে এই দেশের মানুষেরা পাবে সত্যিকারের জনদরদি শাসক। যে তার মায়ের মতোই ভালোবাসবে এই দেশের আমজনতাকে। একুশ শতাব্দীর এ যুগে সফল রাষ্ট্রগুলো যেখানে নাগরিকদের অধিক সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে জোরেশোরে মাথা ঘামাচ্ছে, নিজ দেশের উন্নতির নিত্যনতুন কৌশলের পথে এগোচ্ছে, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরা সেই যুগে যেন আমাদের দেশের জনগণের ন্যূনতম মৌল মানবিক চাহিদা পর্যন্ত কেড়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
স্বদেশপ্রেমের কথা ভুলে স্বদলের ক্ষমতায়নে জনদরদি না হয়ে জনবিরোধী হয়ে উঠছেন। রাজনীতিবিদেরা তা বুঝতে পেরেও ছলনার ছলে সভা-সেমিনার করে অনর্গল বলে যাচ্ছেন, দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গেই আছেন। তবে এখন পর্যন্ত জনগণ তাঁদের সঙ্গে আছেন তা ঠিক, তবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নয়, আছেন বাধ্য হয়ে। আর মনে মনে জপছেন, ওগো জনদরদি, আপনি কোথায়? এটাও রাজনীতিবিদদের ভাবনায় রাখা দরকার। যে দেশের ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে, যে দেশের নাগরিক শান্তিতে নোবেল পেয়ে দেশের সম্মান ঊর্ধ্বে তুলেছেন, যে দেশের স্বাধীনতার জন্য ত্যাগী প্রাণ নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছে, সে দেশের রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার মোহে হীন মন-মানসিকতার কারণে আজ স্বাধীন দেশের জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছেন।
বিশ্ববাসী যে দেশের মানুষকে একসময় বীরের জাতি আখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছিল, ঠিক যেন একইভাবে আমাদের রাজনীতিবিদেরা সে দেশের মানুষকে নতুন করে ভিন্ন এক আখ্যা দিতে বিশ্ববাসীকে বাধ্য করে তুলছেন।
সত্যিকারের রাজনীতিবিদদের ভাবা কর্তব্য, কীভাবে দেশের নাগরিকদের মৌল-মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করা যায়, কীভাবে দেশের মানুষকে ঘরে-বাইরে নিরাপদ জীবনযাপনের সুযোগ করে দেওয়া যায়। যাতে প্রত্যেক মানুষ তার মেধা ও শ্রম দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।
আরিফ মজুমদার
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।