তাঁর শুভাগমনে ইসলাম পূর্ণতা পেয়েছে

মহানবি (সা.) এর রওজা মোবারক, মদিনা, সৌদি আরব
ফাইল ছবি: এএফপি

আল্লাহ তাআলার ভালোবাসার সৃষ্টি বিশ্ব-নিখিল। তাঁর সৃষ্টিতে তিনি সেই ভালোবাসার প্রকাশ দেখতে চান। স্বীয় ভালোবাসার প্রতিবিম্বরূপে প্রেরণ করলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মানবজাতির সর্বোত্তম আদর্শ আখেরি নবী ও সর্বশেষ রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে। তিনি ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানব। মানবীয় অবয়বে আল্লাহর গুণাবলি যতটুকু সম্ভব তার সর্বোচ্চ সমাহার ঘটেছিল মহানবী (সা.)–এর মধ্যে। 

তাঁর জীবন ছিল জীবন্ত কোরআন। তাঁর শুভাগমনে ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘটেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহর রাসুল (হজরত মুহাম্মদ (সা.))–এর মাঝে তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৬১) ‘আল্লাহর রং! আর আল্লাহর রং অপেক্ষা অধিকতর সুন্দর রং কী হতে পারে? আমরা তাঁরই ইবাদতকারী অনুগত বান্দা।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৩৮) ‘অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪)

‘অবশ্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন, তোমাদের যা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী। তিনি মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনি বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ বা উপাস্য তথা ইবাদতের উপযুক্ত মাবুদ নাই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ১২৮-১২৯) 

প্রকৃতির ধর্ম, মানবধর্ম, মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের পূর্ণতাদানের জন্যই মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব। কোরআনের ভাষায়, ‘তিনি তাঁহার রাসুলকে পথনির্দেশ, সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন অপর সব ধর্মের ওপর বিজয়ী করার জন্য। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা-৪৮ ফাতহ, আয়াত: ২৮)

প্রিয় নবীজি (সা.)–এর সুমহান শিক্ষা ‘প্রতিবাদের শ্রেষ্ঠ পন্থা উত্তম আচরণ’। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মন্দের প্রতিবাদ করো উত্তম দ্বারা, তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৯৬)

‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা, ফলে তোমার সহিত যার শত্রুতা রয়েছে, সে–ও তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে।’ (সুরা-৪১ ফুচ্ছিলাত, আয়াত: ৩৪) 

হিংসা-বিদ্বেষ ও কলুষমুক্ত অন্তর নবীজি (সা.)-এর মহান সুন্নত সর্বোত্তম আদর্শ। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে (আদর করে) বলেছেন, ‘হে আমার প্রিয় সন্তান! যদি তুমি পারো তবে সকাল-সন্ধ্যা, রাত-দিন এভাবে অতিবাহিত করো যেন তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো হিংসা-বিদ্বেষ না থাকে, তবে তাই করো। তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমার অন্যতম সুন্নত আদর্শ। আর যারা আমার সুন্নত আদর্শকে (আমলের মাধ্যমে) ভালোবাসবে, তারা প্রকৃত আমাকেই ভালোবাসে আর যারা আমাকে ভালোবাসে, তারা আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে।’ (তিরমিজি: ২৭২৬)

হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল ও সর্বশেষ নবী।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৪০) রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই বলেন, ‘আমি সর্বশেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী নেই। তবে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জালের (নবী দাবিদার) আবির্ভাব ঘটবে।’ (বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)

প্রিয় নবীজি (সা.)–এর ভালোবাসা মুমিনের ইমান, সুন্নতের অনুসরণই ভালোবাসার প্রমাণ। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল (সা.)) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো; তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা-৩ আল–ইমরান, আয়াত: ৩১)  

কিয়ামত পর্যন্ত সব মানুষের দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তির জন্য মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন অনুসরণ ও হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর অনুকরণের কোনো বিকল্প নেই। আসুন! বিশ্বনবীর সুমহান আদর্শ সুন্নত অনুসরণ করে হিংসা–বিদ্বেষ পরিহার করে বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলি, মানবকল্যাণে বিশ্বশান্তি স্থাপন করি। মহানবী (সা.)–এর আগমনের উদ্দেশ্যকে সফল করার ব্রত গ্রহণ করি।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]