আমাদের ফিনিক্স পাখি

খাদিজা বেগম হাসছেন। গতকাল রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিচতলায় সাংবাদিকদের সামনে আনা হয় তাঁকে l ছবি: প্রথম আলো
খাদিজা বেগম হাসছেন। গতকাল রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিচতলায় সাংবাদিকদের সামনে আনা হয় তাঁকে l ছবি: প্রথম আলো

বদরুল চেয়েছিল খাদিজাকে একেবারে শেষ করে দিতে। কিন্তু নিজে উল্টো জব্দ হয়ে গেল। বেঁচে উঠেছেন খাদিজা। শুধু বেঁচেই ওঠেননি, বেশ ভালোভাবে বেঁচে উঠেছেন তিনি। আহ্! কী ভালোই না লাগছে। যেন গ্রিক উপকথার সেই ফিনিক্স পাখির গল্প। আগুনে মরে গেলেও ছাই থেকে আবার বেঁচে ওঠে ফিনিক্স পাখি। খাদিজা হচ্ছেন আমাদের সেই ফিনিক্স পাখি।
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খাদিজাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। একটি ছোট সমস্যা অবশ্য রয়েছে। খাদিজার শরীরের বাঁ দিকটা এখনো অবশ। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ফিজিওথেরাপি দিলে ঠিক হয়ে যাবে। আমরাও আশা করছি, খাজিদা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন।
গত ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা বেগমকে উপর্যুপরি কোপায় বদরুল আলম নামে এক যুবক, যে তখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিল। সে খাদিজাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সাড়া না পেয়ে ক্রোধে ও জিঘাংসায় উন্মত্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই সে খাদিজাকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। খুন করার উদ্দেশ্যে বাজার থেকে চাপাতি কিনে আনে। সেদিন খাদিজা সিলেট এমসি কলেজে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে বের হয়ে আসার পর বদরুল তাঁর ওপর হামলা চালায়। চাপাতি দিয়ে একের পর এক কোপাতে থাকে; ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় খাদিজার দেহ। তাকে যখন স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়, তখন তাঁর অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল যে কেউ ভাবতে পারেননি তিনি বেঁচে থাকবেন। কিন্তু কী অফুরান প্রাণশক্তি খাদিজার! শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বেঁচে উঠেছেন তিনি।
শনিবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে স্কয়ার হাসপাতালের নিচতলায় অভ্যর্থনাকক্ষের সামনে হুইলচেয়ারে হাস্যোজ্জ্বল খাদিজাকে দেখে প্রাণটা ভরে ওঠে। তাঁর সর্বশেষ অবস্থা জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের দোয়ায় সুস্থ আছি, ভালো আছি। দোয়া করবেন যেন ভালো থাকি, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারি।’
আমরা অবশ্যই কামনা করি, খাদিজা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে উঠুন। আবার লেখাপড়া করুন। তাঁর জীবনের সব লক্ষ্য ও ইচ্ছা পূরণ হোক। আর বদরুলদের মতো দুর্বৃত্তদের শাস্তি হোক।
সুখের বিষয় যে খাদিজা সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আবার তিনি আক্রান্ত হবেন না তার নিশ্চয়তা কী। খাদিজাকে হত্যা করা চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার বদরুল এখন কারাগারে। এখন দক্ষতার সঙ্গে মামলা লড়তে হবে, যেন সে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে আবারও খাদিজাকে আক্রমণ করার সুযোগ না পায়। এটা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
একজন খাদিজা একজন বদরুলের পৈশাচিক আক্রমণের মুখে প্রাণে বেঁচে গেছেন। কিন্তু এ দেশে খাদিজার বয়সী মেয়ের সংখ্যা অনেক, আর এই বদরুলের মতো নৃশংস দুর্বৃত্তের অভাব নেই। এক বদরুল কারাগারে। কিন্তু হাজার হাজার বদরুল কারাগারের বাইরে। এদেরকে রুখতে হবে। আর যেন কোনো বদরুল কোনো খাদিজাকে কোপাতে না পারে, সে জন্য সরকারসহ সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অপরাধীদের দমনের জন্য দেশে আইন আছে। সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান হওয়ার জোরে কেউ যেন পার না পায়, সেটাই আমাদের দেখতে হবে।

রোকেয়া রহমান : সাংবাদিক