ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাতের চুক্তি, আরব বিশ্ব কী করবে

দুবাইতে ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে এফটিএ চুক্তিতে সই করেন দুই দেশের অর্থমন্ত্রীছবি: এএফপি

গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আরব-ইসরায়েল সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ একটি পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েল ও উপসাগরীয় কোনো দেশের মধ্যে এটা প্রথম চুক্তি, যাতে কম শুল্কে, সহজ কর সুবিধায় ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তারের সুযোগ তৈরি হলো।

চুক্তির ফলে এখন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা–বাণিজ্য ও যাতায়াত বাড়বে। এর ফলে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর ৫০ বছর ধরে আরব আমিরাত যেভাবে ইসরায়েলকে অস্পৃশ্য হিসাবে বিবেচনা করে এসেছে, সেই ধারা ভেঙে গেল। এখন অন্য আরব দেশগুলোর ওপর একই ধরনের চাপ তৈরি হলো।

ইসরায়েল-আরব আমিরাতের মধ্যকার এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ইসরায়েলের সঙ্গে আরব প্রতিবেশীদের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ প্রচেষ্টা ৪০ বছর ধরে চলে আসছিল। কিন্তু খুব একটা সফলতা পাওয়া যায়নি। ১৯৭০-এর দশকে মিসরের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডানের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি ছাড়া আরব দেশগুলোর সঙ্গে আর কোনো চুক্তি হয়নি ইসরায়েলের।

এ দুটি প্রচেষ্টা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টা দশকের পর দশক ধরে দূরবর্তী হয়েই থেকে গেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী অসন্তোষ ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে বিরোধই বাড়িয়েছে।

এ পরিস্থিতি দুটি কারণে পরিবর্তন হতে শুরু করে। প্রথমত, ১৯৯০-এর দশকে সম্পাদিত অসলো চুক্তি। যদিও এটা সফল শান্তি চুক্তি নয়, কিন্তু এর ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠন ও গাজা থেকে ইসরায়েলিদের প্রত্যাহারের ক্ষেত্র তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আরব দেশগুলো ও ইসরায়েলের ওপর ইরানের সৃষ্ট নিরাপত্তা উদ্বেগ।

বিশ্বের যে ২৮টি দেশ ইসরায়েলকে এখনো স্বীকৃতি দেয়, তার মধ্যে সৌদি আরবসহ আরব লিগের ১৫টি দেশ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী মাসে সৌদি আরব সফর করবেন। রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটা রোডম্যাপ হোয়াইট হাউস তৈরি করেছে বলেও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরবকে চুক্তিতে আনতে গেলে আরও উদ্যোগের সঙ্গে চাপ সৃষ্টি করাও প্রয়োজন।

ফিলিস্তিন এখনো আরব-ইসরায়েল সম্পর্কে ধারাবাহিক উত্তেজনার উৎস। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বা পৃষ্ঠপোষকতায় পরীক্ষামূলকভাবে হলেও একটা শান্তিপ্রক্রিয়া সম্পাদিত হতেই পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দুই দেশ আরব আমিরাত ও ইসরায়েল এফটিএতে যাওয়ার কারণ হলো, আমিরাতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র অনানুষ্ঠানিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে একটি নীতি মেনে আসছিল। সেটা হলো, সামরিক শক্তির দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ যেন ইসরায়েলের চেয়ে শক্তিশালী না হয়। এ ছাড়া বারাক ওবামার আমলে ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্র অঘোষিতভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখে।

এসব গোপন ধরনের বোঝাপড়া থাকলেও আকস্মিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও আরব কোনো দেশের প্রকাশ্য চুক্তি সই হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ইসরায়েল, বাহরাইন, আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আব্রাহাম চুক্তি নামে এটি সম্পাদিত হয়। এ চুক্তির ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে দুটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ খোলে। সুদান ও মরক্কোও ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েক মাসের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সম্মত হয়। সৌদি আরবের সঙ্গেও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে—এ রকম গুজবও ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে এখন দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়বে। এ ছাড়া সরাসরি বিমান চলাচল করবে। বাণিজ্য চুক্তির মধ্য দিয়েই এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েল ও আরব আমিরাত তাদের সম্পর্কের যে উন্নয়ন ঘটেছে, সেটা আরও দৃঢ় করতে চায়। এখন দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের আকার ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পর আরব আমিরাত ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হতে যাচ্ছে।

এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ হোক আর না-ই হোক, এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাড়বে। এরই মধ্যে এমিরেটস এয়ারলাইন দুবাই থেকে তেল আবিবে প্রতিদিন বিমান চলাচল শুরু করেছে।

বিশ্বের যে ২৮টি দেশ ইসরায়েলকে এখনো স্বীকৃতি দেয়, তার মধ্যে সৌদি আরবসহ আরব লিগের ১৫টি দেশ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী মাসে সৌদি আরব সফর করবেন। রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটা রোডম্যাপ হোয়াইট হাউস তৈরি করেছে বলেও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরবকে চুক্তিতে আনতে গেলে আরও উদ্যোগের সঙ্গে চাপ সৃষ্টি করাও প্রয়োজন।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

ক্রিস্টিয়ান লামিয়ের লন্ডনভিত্তিক কৌশলগত ফার্ম আর্সিপেলের প্রতিষ্ঠাতা