গত শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ (অবকাঠামো) শীর্ষক একটি বিল পাস হয়েছে, যা প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর আইনে পরিণত হবে। রাস্তাঘাট, সেতু, পরিবহন এবং ব্রডব্যান্ড খাতকে আরও উন্নত করতে বিলটি পাস করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এটি আইনে পরিণত হলে শিল্প ও বাণিজ্য খাত লাভবান হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যে দুটি বিলের দিকে সবার নজর ছিল, এটি তার একটি।
দ্বিতীয় বিলটির নাম ‘বিল্ড ব্যাক বেটার’। এই বিলে শিশুসেবা ও প্রাক্-বিদ্যালয়, বয়স্ক সেবা, জনস্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপত্রনির্ভর ওষুধের দাম নির্ধারণ, অভিবাসন এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধসংক্রান্ত প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। এই বিলকে জনগণের সেবাসংক্রান্ত বিল বলা হচ্ছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, ১৫ নভেম্বর এই বিল পাসের জন্য ভোটে তোলা হবে।
কোনো লোক যদি বিল্ড ব্যাক বেটার বিলের দিকে ভালো করে তাকায় তাহলে দেখতে পাবে, শুরুতে বিলটিতে যে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল, বর্তমানের বরাদ্দকে তার ছায়া বলা যেতে পারে। এই বিলের প্রাথমিক প্রস্তাবে প্রায় ছয় লাখ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কংগ্রেসে আলোচনার পর তা প্রথমে তিন লাখ কোটিতে নামে এবং সেখান থেকে তা ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি ডলারে এসে নামে।
দুঃখজনকভাবে এই তহবিল একেবারেই অপ্রতুল। স্বাস্থ্যসেবা, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধ, শিক্ষা ও অন্যান্য জনসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই বরাদ্দ একেবারেই কম।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পরপরই মার্কিন পরমাণু চুল্লির ‘হালনাগাদকরণ ও আধুনিকায়নের’ জন্য যে প্রকল্প চালু করেছিলেন, তার বরাদ্দ ছিল এক লাখ কোটি ডলার। সেই বরাদ্দ বাড়তে বাড়তে এখন তা পৌনে দুই লাখ কোটি ডলারে এসে ঠেকেছে। সেখানে কোনো বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব আসেনি। তার মানে ধ্বংসযজ্ঞের কিনারে আমাদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রধান দুই দলই এক পায়ে খাড়া আছে।
শুধু ২০২২ অর্থবছরে পেন্টাগন ও পরমাণু অস্ত্রের পেছনে জো বাইডেনের দেওয়া বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র যদি তার সামরিক ব্যয় ৫০ শতাংশও ছেঁটে ফেলে, তাহলেও তা চীন ও রাশিয়ার যৌথ সামরিক ব্যয়ের চেয়ে বেশি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কার্বন নির্গমন রোধের মতো কার্যক্রম স্বচ্ছন্দ রাখতে যদি সামরিক ব্যয়ে সামান্য ছাঁটাই করতে হয়, তাহলে তা করা উচিত। একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যদি তা করতে রাজি না হন, তাহলে বুঝতে হবে, হয় তিনি মানসিকভাবে শতভাগ সুস্থ নন অথবা ভালো কিছু করার কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই।
আমরা যদি গোটা ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা’ বাজেটের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, ১৭টি গোয়েন্দা সংস্থার জন্য বছরে বাজেট রাখা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় সরকার যাতে আমাদের ফোনের কথোপকথন বা ই-মেইলের টেক্সট যখন খুশি দেখতে পারে বা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা যেকোনো চীনা শিক্ষার্থীর ওপর নজরদারি চালানো যায়, সে জন্য এই বরাদ্দকে ক্রমাগত বড় করা হচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন মিডিয়ায় বিল্ড ব্যাক বেটার বিল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বরাদ্দের অর্থের জোগান কোত্থেকে আসবে, তা নিয়ে অনেকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট থেকে ১৩ শতাংশ ছেঁটে ফেললে এই বিলের সমুদয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাতে বিলের বরাদ্দ একটুও কমাতে হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র যদি তার সামরিক ব্যয় ৫০ শতাংশও ছেঁটে ফেলে, তাহলেও তা চীন ও রাশিয়ার যৌথ সামরিক ব্যয়ের চেয়ে বেশি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কার্বন নির্গমন রোধের মতো কার্যক্রম স্বচ্ছন্দ রাখতে যদি সামরিক ব্যয়ে সামান্য ছাঁটাই করতে হয়, তাহলে তা করা উচিত। একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যদি তা করতে রাজি না হন, তাহলে বুঝতে হবে, হয় তিনি মানসিকভাবে শতভাগ সুস্থ নন অথবা ভালো কিছু করার কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই।
যদি সামরিক ব্যয় কমিয়ে বিল্ড ব্যাক বেটার বিলের বরাদ্দ বাড়ানো না হয়, তাহলে সেই সামরিক বরাদ্দকে ‘বম্ব ব্যাক বেটার’ বলা অত্যুক্তি হবে না। সাধারণ আমেরিকান নাগরিকদের কষ্টার্জিত ডলারকে খাবার কেনার বদলে বন্দুক কেনায় খরচ করতে দেওয়া কোনো সভ্য কথা হতে পারে না।
ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
● জন ওয়ালশ মার্কিন লেখক ও অধ্যাপক